×

সারাদেশ

বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে নিরপেক্ষতার সুযোগ নেই: শ্যামল দত্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪৩ এএম

বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে নিরপেক্ষতার সুযোগ নেই: শ্যামল দত্ত

শনিবার ‘রোটারীর পাবলিক ইমেজ বিল্ডিং সেমিনার ও গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও অন্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ

রোটারী সম্মাননা পেয়েছেন একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত রোটারিয়ান বংশীবাদক ক্যাপ্টেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম ও দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। রোটারী ইন্টারন্যশনালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোটারী ক্লাব অব চিটাগং হিলটাউনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রোটারীর পাবলিক ইমেজ বিল্ডিং সেমিনার ও গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠিত হয়।

গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দুই গুণী ব্যক্তিত্বকে রোটারী সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, রোটারী সমাজসেবায় ব্রত। আজকে যে দুজন গুণীকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে খুবই প্রতিভাবান। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার পক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে বংশীবাদক ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে কাজ করছেন। গুণীজনকে সম্মাননা দিলে সমাজে গুণী মানুষ সৃষ্টির পথ সুগম হয়।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নিরপেক্ষতার নাম করে ভারসাম্য রক্ষা করার পক্ষপাতি আমি নই। বাংলাদেশের প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে নিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে- একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ। যে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে। দেশ ভাগের পরপরই তিনি বলেছিলেন, এই পাকিস্তান তো আমার স্বপ্নের দেশ না। যদি তা-ই হতো, মুসলিম লীগের একজন তরুণ কর্মীকে কেন দেশভাগের দুই বছরের মধ্যে ৪৯-এ আবার একটি দল গঠন করতে হলো। যেটির নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ। বঙ্গবন্ধু সে সময় জেলে। কারণ, বাঙালির জন্য একটি রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা তার ছিল। বাঙালির জন্য একটি ভূখণ্ড, বাঙালির জন্য একটি মানচিত্র। সেটি বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করেছেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়ে। বাঙালির এই রাষ্ট্র- আজকে আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি, বাঙালির সেই কি আছে? সেই আত্মজিজ্ঞাসার জায়গায় যদি বিশ্লেষণ করি- অনেকেই অখুশি হবেন। কিন্তু মূল কথাটা হচ্ছে- আমাদের সেই সংগ্রামটা চালু রাখতে হবে। একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে। যে রাষ্ট্রে কোনো শোষণ থাকবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি একটি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। কিন্তু আজকের এই সমাজে দরিদ্রতা খুব প্রকট। ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক প্রকট। অনেক মানুষ ধনী হয়েছেন, অনেক অর্থবিত্ত হয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। আবার মানুষে মানুষে ফারাক, অর্থের ফারাক, বিত্তের ফারাকও অনেক বেড়েছে। সুতরাং এই বৈষম্য কমিয়ে আনার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের গণমাধ্যম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য, মতবিভাজনে গণমাধ্যম বিভক্ত। যে কারণে সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে, নিরপেক্ষভাবে সাংবাদিকতা করা কঠিন।

চট্টগ্রামের বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে নিয়ে ভাবার মানুষ অনেক কম। করোনা মহামারির সময় আমি দেখেছি, চট্টগ্রামে মানুষ অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করেছে, বাংলাদেশের কোথাও এ রকম হয়নি। অথচ বাংলাদেশের সব ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়ি চট্টগ্রাম। তারা কেউ একটি ভালো হাসপাতাল করেনি, তারা কেউ একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেনি। চট্টগ্রামে যত নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার সবগুলোই অনেক আগের করা। চট্টগ্রামের ৩০ হাজার কোটি টাকার মালিক, ৫০ হাজার কোটি টাকার মালিকরা কী করেন। তারা কেন একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি ভালো হাসপাতাল বানায় না? কেন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির এক ভাইয়ের মুখের অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে আরেক ভাইয়ের মুখে লাগাতে হয়? তারা চাইলে তো রাতারাতি একটি হাসপাতাল বানাতে পারে। দুর্ভাগ্য আমাদের! শ্যামল দত্ত বলেন, চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবার লোকের অভাব। চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি, ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। অথচ ’৮০-র দশকের চট্টগ্রাম কত প্রাণবন্ত ছিল। প্রাণ-প্রকৃতিতে ভরপুর। চমৎকার একটি শহর ছিল। আমরা জোছনা রাতে নৌকা নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে বেড়াতে যেতাম। এখন সেই কর্ণফুলী দূষিত। এই শহরে এত নেতা, এত মন্ত্রী, এত বড় বড় ব্যক্তিত্ব- কিন্তু চট্টগ্রাম শহরটা ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এই শহরটাকে বাঁচানো দরকার সবাই মিলে।

বংশীবাদক ক্যাপ্টেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম বলেন, রোটারী আমার জীবন গড়ে দিয়েছে। আমার সব প্রাপ্তিতে রোটারীর অবদান রয়েছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতির আবহে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন রোটারী ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর আবু ফয়েজ খান চৌধুরী। মূল বক্তা ছিলেন সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. মো. তৈয়ব চৌধুরী। তিনি বলেন, ১৯০৫ সাল থেকে রোটারী সমাজ সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। গুণী অতিথিদের সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা গর্বিত, আমরাও সংবর্ধিত। সবাই মিলে কাজ করলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রোগ্রাম চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে ও রোটারী ক্লাব অব চিটাগং হিলটাউনের সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক গভর্নর এম এ আওয়াল, রোটারী গভর্নর-নমিনী ইঞ্জিনিয়ার মো. মতিউর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে চাটগাঁর বাণী থেকে প্রকাশিত রোটারীবিষয়ক বিশেষ সংখ্যা ‘বিশ্বসেবালয়’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে রোটারী প্রত্যয় পাঠ করেন রোটারিয়ান প্রদীপ বিশ্বাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App