×

অপরাধ

পারিশ্রমিক নিয়ে হাতাহাতির সময়ই খুন সুপার ভাইজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০২:০৪ পিএম

পারিশ্রমিক নিয়ে হাতাহাতির সময়ই খুন সুপার ভাইজার

আটককৃত আসামি মো. ইউসুফ ভুইয়া

পারিশ্রমিক নিয়ে হাতাহাতির সময়ই খুন সুপার ভাইজার

যাত্রীবাহী পরিবহন ইকোনো সার্ভিসের সুপার ভাইজার রিয়াদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. ইউসুফ ভুইয়া। আটক এ ব্যক্তিও যাত্রীবাহী পরিবহন ইকোনো সার্ভিসের হেলপার। কাজ নেয়ার একদিনের মাথায় পারিশ্রমিক নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে হাতাহাতির সময় হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। গাড়িতে থাকা লোহার তৈরী হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে উপর্যুপরি মাথা বরাবর আঘাত করলে সে মারা যায়। তখন সহকারী ইউসুফ তাকে গাড়ির আসনের উপর বসিয়ে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়।

যাত্রীবাহী বাসে সুপারভাইজারের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডি এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর। রবিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, চলতি মাসের গত ৯ এপ্রিল লক্ষীপুর সদর থানাধীন ঝুমুর মোড়স্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ইকোনো সার্ভিসের ঢাকা মেট্রো-ব- ১৫-০১০৩ নামের যাত্রীবাহী বাসের ভিতরে সেই গাড়ীর সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে মো. ইউসুফ ভুইয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, তদন্তের ধারাবাহিকতায় এলআইসির একটি চৌকস দল অভিযান পরিচালনা করে গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে নরসিংদী জেলার মাধবদী থানা এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় যে, সে ভবঘুরে জীবন যাপন করতে থাকলে ওবায়দুর নামে তার এক প্রতিবেশী ভাই তাকে বাসে হেলপারের চাকরি দেয়ার প্রস্তাব করলে সে রাজি হয়ে যায়। তখন ওবায়দুর তার পরিচিত ইকোনো সার্ভিসের চালক নাহিদের সঙ্গে কথা বলে সেই বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করে দেয়।

এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, চলতি মাসের ৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর মানিকনগর বাস কাউন্টার থেকে চালক নাহিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন, পুরাতন স্টাফ শিপনসহ যাত্রী নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে তারা। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষীপুর পৌঁছে সকল যাত্রীদেরকে গন্তব্যে নামিয়ে সদর থানাধীন ঝুমুর মোড়স্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাসটি পার্কিং করে। পরে পুরাতন স্টাফ শিপন দুই দিনের ছুটিতে যাবে বিধায় তার স্থলে গাড়িটি ইউসুফকে পরিষ্কার করতে বলা হলে সে বাসটি ধোয়া-মোছা শুরু করে। এরই মধ্যে চালক নাহিদ হোসেন, সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও সহকারী শিপন তাদের সারাদিনের প্রাপ্য মজুরী ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়। মজুরী নিয়ে নাহিদ ও শিপন বাড়ী চলে যায়।

এসএসপি বলেন, গাড়ি পরিষ্কার শেষে রাত প্রায় ১টার দিকে নতুন সহকারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ইউসুফ গাড়িতে অবস্থানরত সুপারভাইজার লিটনের কাছে তার পারিশ্রমিক চায়। এ সময় সে জানায় যে, তার ডিউটি এখনো শুরু হয়নি। ০৯ এপ্রিল ভোর থেকে তার ডিউটি শুরু হবে এ লক্ষীপুর-ঢাকা প্রতিটি আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য সে ৪০০ টাকা প্রাপ্য হবেন। টাকা পয়সার বিষয়ে কোনো কথা থাকলে গাড়ীর চালক নাহিদ ওস্তাদের সঙ্গে  কথা বলার জন্য অনুরোধ করে লিটন। কিন্তু ইউসুফ ঢাকা থেকে লক্ষীপুর পর্যন্ত পুরাতন সহকারী শিপনের সঙ্গে কাজ শিখতে শিখতে এসেছে বিধায় তাকেও প্রারিশ্রামিক দিতে হবে মর্মে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক এবং পরবর্তীতে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা প্রায় দেড় ইঞ্চি লম্বা লোহার তৈরী হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে উপর্যুপরি মাথা বরাবর আঘাত করলে সে উক্ত গাড়ির ভিতরই মৃত্যুবরণ করে। তখন সহকারী ইউসুফ তাকে গাড়ির সিটের উপর বসিয়ে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরে ভিকটিম রিয়াদ হোসেন লিটনের স্ত্রী হালিমা আক্তার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষীপুর সদর থানায় মামলা করে। ওই মামলার ছায়া তদন্তে নেমে তাকে আমরা গ্রেপ্তারে সমর্থ হই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App