প্রতিবার ঈদের আগে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। আসন্ন ঈদে ৫ শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের অনিশ্চিয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সরকার অবশ্য নির্দেশ দিয়েছে, ২০ রোজার মধ্যে দেশের পোশাক শ্রমিকসহ সব কারখানা শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করতে। সেই সঙ্গে ঈদের ছুটির আগে এপ্রিল মাসের প্রথম ১৫ দিনের বেতন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গত সোমবার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সংক্রান্ত একটি ত্রিপক্ষীয় পর্ষদ সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান এ নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি বলেন, গার্মেন্টসসহ রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকদের ঈদের বোনাস, চলতি (এপ্রিল) মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতন এবং যদি বকেয়া থাকে তাসহ ঈদের ছুটির আগেই মালিকদের প্রদান করবেন। মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পরও শ্রমিকরা শঙ্কায় ভুগছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা তাদের বেতন-বোনাসের দাবিতে মিছিল-মিটিং করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বেতন-বোনাস পরিশোধে গার্মেন্টস মালিকরা গড়িমসি করছেন। এমন ঘটনা প্রতিবছর দেখা যায়। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এই খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। বছরের পর বছর সরকার বাজেটের মাধ্যমে গতানুগতিক পথে। এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে এই শিল্পের মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। গত বছর করোনা ইস্যুতে নতুন করে সংকটে পড়ছে তৈরি পোশাক খাত। তবে সরকার ওই সময়ে সংকটকালীন শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। শ্রমিকরা যেন সঠিক সময়ে তাদের বেতন বুঝে নিতে পারেন বিজিএমইএ তদারকিও করেছে। আমরা এর আগেও সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছিলাম, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। গুরুত্বপূর্ণ এ অবদান সত্ত্বেও পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এ খাতের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। এরপরও অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের চাকরি নিরাপত্তা, বেতনের নিশ্চয়তা। এবার বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে আবারো শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনো করোনাকাল চলছে। মানুষের অভাব-অনটন লেগে আছে। দেশের দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ দেখতে চাই না। ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ করছি।