×

সম্পাদকীয়

বাংলা নববর্ষ : নতুন দিনের প্রত্যাশায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:৪৯ এএম

বাংলা নববর্ষ : নতুন দিনের প্রত্যাশায়

চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারায় বাঙালি আজ বরণ করবে নতুন বছরকে। গত দুই বছর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখসহ সব ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে এবার বাংলা নববর্ষ পালনে সারাদেশে নানা কর্মসূচি রয়েছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। রজনীকান্ত সেনের গান ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ এবারে চারুকলার বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ মূলত উদযাপিত হতো ব্যবসায়ীদের হালখাতা, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রামীণমেলা- এসবের মাধ্যমে। যদিও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা সব দাপ্তরিক ক্ষেত্রে ইংরেজি তারিখই প্রাধান্য পাচ্ছে, তবুও এ দেশের প্রকৃতি, জলবায়ু, ঋতুবৈচিত্র্য ও কৃষিকে বুঝতে আমাদের ফিরে যেতে হয় বাংলা সনের কাছে। তাই দেখা যায়, এ যুগে এসে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তি দুই-ই বেড়েছে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি রচনা এবং ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিকাশে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। আসলে সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখ রাঙানির মুখে নগরকেন্দ্রিক বাংলা নববর্ষ উদযাপন একটা লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে। এ লড়াই আজো চলছে। অনাকাক্সিক্ষত হলেও পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে নানা সময়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলে বলা হতো- বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের উৎসব, মুসলমানের জন্য নাজায়েজ। সেই ধারা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়াশীল মহল এখনো সক্রিয় আবহমান বাঙালিত্ব ধ্বংস করে ধর্মের ধুয়া তুলে কায়েমি স্বার্থে কূপমণ্ডূক ব্যবস্থা কায়েমে। অশুভ শক্তি রমনার বটমূলে ছায়ানটের ১৪০৮ সনের বর্ষবরণ উৎসবে ঘটিয়েছে নারকীয় বোমা হামলা। তাতে ঝরে গিয়েছিল কয়েকটি তাজা প্রাণ। সেই শোকাবহ ঘটনার স্মৃতি ভোলার নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। আমরা দেখেছি, বাঙালি সংস্কৃতির, তার উৎসবের উদার সম্প্রীতি-চেতনাকে বিনষ্ট করার জন্য বারবার আঘাত হানা হলেও বাঙালির উৎসবে মানুষের মহাসম্মিলনকে রুদ্ধ করা যায়নি, যাবেও না। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, সব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে জাগ্রত সংস্কৃতিই আমাদের শক্তি জোগাবে। শত দুর্বিপাকে, শত বিপর্যয়ে মানুষের এই হার না মানা সংগ্রাম বৈশাখেরই রুদ্র চেতনার বহিঃপ্রকাশ যেন। এই চেতনার কাছে তাবৎ উৎপীড়ক, অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটবেই। এই পহেলা বৈশাখে মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের নতুন শপথে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, সংস্কৃতির শক্তিতে, মানবিকতার শক্তিতে। একটি সুখী, সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতিময় সমাজ আমাদের লক্ষ্য। ১৪২৯ বঙ্গাব্দের আজকের এই সূর্যোদয় সব অন্ধকার কেটে আমাদের নিয়ে যাক এমন এক সকালের দিকে যেখানে থাকবে না প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধকার, অশিক্ষার অন্ধকার, দারিদ্র্য আর অনটনের অন্ধকার, করোনার অন্ধকার। শুভ নববর্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App