×

খেলা

বেঞ্জেমার গোলে সেমি ফাইনালে রিয়াল, বিদায় বায়ার্নের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫৩ এএম

বেঞ্জেমার গোলে সেমি ফাইনালে রিয়াল, বিদায় বায়ার্নের

গোলের পর উল্লাস বেঞ্জেমার

প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলে হারার পরেও দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের মাঠে স্বপ্নের ফুটবলে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়াল চেলসি। ম্যাচে ৩-২ গোলে চেলসি জিতলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের ব্যবধানে সেমিতে উঠে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ফলে বিদায় নিয়েছে গতবারের ইউরোপজয়ীরা। আর চেলসিকে হারিয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল হারেরও একটা বদলা নিল রিয়াল।

চেলসির হয়ে গোল করেন মেসন মাউন্ট (১৫ মিনিট), আন্তোনিয়ো রুদিগার (৫১ মিনিট) এবং টিমো ওয়ের্নার (৭৫ মিনিট)। সকলেই যখন ধরে নিয়েছিলেন রিয়ালের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এরপরই বেনজেমা-মদরিচদের পুনরুত্থান। ড্রেসিংরুমে ঠাট্টা করে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রদ্রিগো মদরিচকে বাবা ডাকেন, কারণ মদরিচের বয়স রদ্রিগোর বাবার সমান। সে হিসেবে রদ্রিগো মদরিচের ‘ছেলে’-ই। সেই পাতানো ‘ছেলে’কে দিয়ে গোল করিয়ে রিয়ালের নিবু নিবু আশাটা আরেকটু উজ্জ্বল করে তোলেন এই মদরিচ। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে করিম বেনজেমার গোলেই নিশ্চিত হয়, প্রত্যাবর্তনের গল্পটা পূর্ণতা পাচ্ছে না চেলসির।

একাদশ দিয়ে প্রথমেই রিয়ালকে চমকে দিয়েছিল চেলসি। দলের অধিনায়ক সেজার আজপিলিকেতা বেঞ্চে, তার জায়গায় নামান হয়েছে ইংলিশ মিডফিল্ডার রুবেন লফটাস-চিককে, যিনি বলতে গেলে তেমন সুযোগই পান না খেলার। তাও আবার লফটাস-চিককে তার পছন্দের জায়গা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে নয়, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাইট উইংব্যাক পজিশন সামলানোর জন্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে রাইট উইংব্যাক রিস জেমস কোথায় খেলেছেন? ৩-৪-৩ ছকে তাকে ডানদিকের সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলিয়েছেন কোচ টমাস টুখেল।

এই কৌশলেই ম্যাচের শুরু থেকে রিয়ালের সঙ্গে সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছিল চেলসি। পরের মাঠে খেলা বলে নিজেদের পরিচিত নীল জার্সি ছেড়ে হলুদ জার্সি পরেছিল চেলসি। কিন্তু খেলা দেখে কে বলবে, সেটা যে তাদের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ ছিল না? প্রথম থেকেই রিয়ালকে চেপে ধরে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নরা। লফটাস-চিককে খেলানোর সিদ্ধান্তটা যে কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, সেটা বোঝানোর জন্য ১৫ মিনিট সময় নিয়েছেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। মেসন মাউন্টকে দিয়ে ম্যাচের প্রথম গোলটা যে তিনিই করিয়েছেন!

৫১ মিনিটেই নিজেদের পরিশ্রমের ফসল পেয়ে যায় দলটা। মেসন মাউন্টের কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন জার্মান ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। ততক্ষণে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলের সমতায় দুই দল! পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্নটা তখন রিয়ালের চেয়ে চেলসিরই বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে! ৬২ মিনিটে রিয়াল সমর্থকদের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়েই দিয়েছিলেন চেলসির লেফট উইংব্যাক মার্কোস আলোনসো। কিন্তু তার গোলটা বাতিল হয় হ্যান্ডবলের কারণে।

চেলসির গোল বাতিল হওয়ার পরেই রিয়াল যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে। বেনজেমার একটা শট পোস্টে লাগে। কিন্তু ৭৫ মিনিটে আরেকটা গোল করে বেনজেমাদের আবারও থমকে দেন জার্মান ফরোয়ার্ড টিমো ভেরনার। এই অগ্রগামিতা অবশ্য বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি ব্লুজরা। ৮০ মিনিটে মদরিজের অসাধারণ এক পাস পেয়ে রদ্রিগোর দারুণ ফিনিশিংয়ে টাই আবার সমতায় ফেরে। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

আর সেখানেই জাদু দেখাবেন বলেই যেন জাদুকর এতক্ষণ বসে ছিলেন চুপচাপ। প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করা বেনজেমা ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠলেন আবারও। টেনে তুললেন রিয়ালকে। জাদুকর শেষ মুহুর্তে জাদু দেখাবেন বলেই যেন সারা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে ভিনিসিয়ুসকে আটকে রাখা রিস জেমস ঠিক ওই সময়টাতেই ব্যর্থ হলেন। নিখুঁত ক্রস দিলেন ভিনিসিয়ুস। জাদুকর শেষ মূহুর্তে জাদু দেখিয়ে বার্নাব্যুকে উদ্বেল করবেন দেখেই যেন গোটা ম্যাচে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে আর নিজে গোল করে প্রায় নায়ক বনে যাওয়া রুডিগার ঠিক ওই সময়টাতেই নিজের নিয়ন্ত্রণ ঠিক ধরে রাখতে পারলেন না, পা ফসকে একটু পড়ে গেলেন।

অতটুকু সুযোগই যথেষ্ট ছিল করিম বেনজেমা নামের জাদুকরের জন্য। নিখুঁত হেডে গোল করলেন, দুই লেগ মিলিয়ে দলকে এগিয়ে দিলেন ৫-৪ গোলের ব্যবধানে। সে ব্যবধান আর ঘোচাতে পারল না চেলসি। রিয়ালও পাড়ি জমাল পরের রাউন্ডে, সেমিফাইনালে।

এদিকে, ঘরের মাঠে ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে ১-১ ড্র করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিল বায়ার্ন মিউনিখ। ৫২ মিনিটে গোল করেন রবার্ট লেওয়ানডস্কি। কিন্তু ৮৮ মিনিটে সমতা ফেরান চুকুয়েজ়ে। দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ জিতে সেমিফাইনালে ভিয়ারিয়াল।

আজ বুধবার পেপ গুয়ার্দিওলার দল ম্যানচেস্টার সিটিকে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে নামতে হবে দিয়েগো সিমিওনের আতলেতিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। প্রথম পর্বের ফল ১-০। কিন্তু তার পরেও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না গুয়ার্দিওলা।

শেষ চারের অঙ্কটা খুব স্পষ্ট। ম্যান সিটি ম্যাচ ড্র রাখলে বা ফের জিতলে পেয়ে যাবে সেমিফাইনালে খেলার ছাড়পত্র। সেই সুযোগ রয়েছে আতলেতিকোর সামনেও। ম্যাচে যদি লুইস সুয়ারেসরা ২-০ গোলে জেতেন, তা হলেই তারাও চলে যেতে পারেন শেষ চারে। যদি ১-০ জেতেন, তা হলে ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকারে। ঘরের মাঠে বিপজ্জনক আতলেতিকো তাই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ম্যান সিটির।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App