×

জাতীয়

কৃষক লীগ নেতার প্ররোচনায় দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম

কৃষক লীগ নেতার প্ররোচনায় দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাজশাহীতে দুইজন আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ পরিস্থিতি ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় কথা বলেন বক্তারা। ছবি: ভোরের কাগজ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেউপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কৃষক লীগের সভাপতি ও নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের প্ররোচনায় দুজন আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (১৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত রাজশাহীতে দুইজন আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ পরিস্থিতি ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিযোগ উত্থাপন করেন।

বক্তারা বলেন, সাঁওতাল দুই ভাই মাঠে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। দিনের পর দিন পানির জন্য ঘুরলেও তাদের পানি দেয়া হয়নি। তারা ওই ওয়ার্ডের দেউপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কৃষক লীগের সভাপতি ও নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের কাছে পানির জন্য ধর্ণা দিলেও পানি পাননি। সেসময় তারা (দুই ভাই) নলকুপ অপারেটরকে বলেছিল, পানি না দিলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবো। তখন সাখাওয়াত তাদের বলেছিলেন, আগে বিষ খাও, তারপর পানি দেবো। এভাবেই দুই কৃষককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া হয়।

সভায় দুই কৃষকের আত্মহত্যা ও বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ পরিস্থিতি ও পানি ব্যাবস্থাপনা বিষয় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেসবাহ কামাল। সভা প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা (এমপি), র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাইদ খান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেশ মাঝি ও রাজশাহি জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজওয়াড়।

মেসবাহ কামাল ধারণাপত্রে উল্লেখ করেন, জেঠতুতো দুই ভাই রবি মার্ভি ও অভিনথ মাড়ি দিনের পর দিন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কাছে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচের পানির জন্য ধর্ণা দিলেও পানি পাচ্ছিলেন না। তারা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলেন, পানি না দিলে এমনিতেই তাে না খেয়ে মরে যেতে হবে। তার চেয়ে আমরা আত্মহত্যা করবাে। বিএমডিএর কর্তাব্যক্তিরা হয়তাে ভাবতেও পারেননি এ দুই সাঁওতাল সত্যিই আত্মহত্যা করবেন। দুই ভাই একসঙ্গে গভীর নলকূপের সামনে ২৩ মার্চ কীটনাশক পান করেন। রাতেই অভিনাথের মৃত্যু হয়। আর রবি মার্ভি ২৫ মার্চ রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সাঁওতাল দুই ভাই মাঠে বােরাে ধান চাষ করেছিলেন। দিনের পর দিন পানির জন্য ঘুরলেও তাদের ক্ষেতে পানি দেয়া হয়নি। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিনাথ মার্ভির স্ত্রী রােজিনা হেমব্রম নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হােসেনের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যা প্ররােচনার মামলা করেছেন।

এমপি ফজলে হোসেন বলেন, এ দুই জনের মতো অনেক কৃষক প্রাণ দিচ্ছেন। অনেকে ভূমিহারা হয়ে যাচ্ছেন। এ দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার বিচার করতেই হবে। পুলিশ এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে চেয়েছিলেন। আমি সেখানে গেছি। সরজমিনে দেখেছি। অন্যের প্ররোচনায় দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছে।

বিমল চন্দ্র রাজওয়াড বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট মহাদেবপুর থানা পুলিশ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হােসেন বাদশা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ এবং ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে মামলা নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরবর্তীতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা প্ররােচনার সাথে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে দায়েরকৃত অভিযােগ পুলিশ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে এবং এজাহারভুক্ত একজন আসামি পুলিশ গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছেন। তবে শুধু এই হত্যাকাণ্ডের বিচারই নয়, দরকার বরেন্দ্র অঞ্চলের তথা গােটা দেশের সেচ পরিস্থিতি ও পানি ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি তলিয়ে দেখা।

জমিতে পানি না পেয়ে গত ২৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক রবি মাৰ্ডি (২৭) ও অভিনাথ মার্ভি (৩৬) বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App