×

সম্পাদকীয়

লালনিরহাটে শিশু নির্যাতন : এমন নিষ্ঠুরতার অবসান হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২, ০৫:২৮ এএম

সামান্য গাছের সুপারি চুরির অভিযোগে ১৩ বছর বয়সি চয়ন নামে একটি শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের বিষয়টি যেমন দুঃখজনক, তেমন মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। গত শনিবার বিকালে লালমনিরহাট জেলা সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের দক্ষিণ হিরামানিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চয়ন চন্দ্র ওই গ্রামের মিন্টু চন্দ্রের ছেলে। চয়নকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছে। দেশে সাম্প্রতিককালে শিশু নির্যাতন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রায় প্রতিদিনই ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় শিশুহত্যা ও নির্যাতনের খবরা-খবর দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, চয়ন দক্ষিণ হিরামানিক এলাকার প্রিয়নাথ রায়ের গাছের সুপারি শনিবার দুপুরে চুরি করে নিয়ে যায়। এমন অভিযোগে প্রিয়নাথ রায় ও তার ছেলে রবিন চন্দ্র রায় বিকালে চয়নের বাড়ি গিয়ে তাকে ধরে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে গাছের সঙ্গে দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে চয়ন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। আমাদের দেশে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন নিঃসন্দেহে আন্তরিক ও নিবিড়। সত্য বটে দেশের আর্থসামাজিক সমস্যা-সংকট ও আর্থিক টানাপড়েনে সর্বদাই এ বন্ধনটুকু ধরে রাখা যাচ্ছে না। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধেও কেন যেন অবক্ষয় ও ভাঙন ধরতে শুরু করেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত এর যথার্থ কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করা। কেননা, শিশুর সঙ্গে কারো দ্ব›দ্ব-সংঘাত থাকে না। দেশে শিশু-কিশোর নির্যাতনবিরোধী কঠোর আইন থাকলেও সমস্যা রয়েছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে। অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় সঠিক ধারায় মামলা করা হয় না, আবার অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের সহযোগিতা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অপরাধী যথাযথ শাস্তি পায় না। আবার নির্যাতনকারীর মৃত্যুদণ্ডের দৃষ্টান্ত থাকার পরও একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে দেখছি আমরা। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত সিলেটের শিশু রাজন হত্যা এবং খুলনায় রাকিব হত্যা বহুল আলোচিত ঘটনা, যা দেশব্যাপী রীতিমতো আলোড়ন তোলে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্রবল ক্ষোভ ও ঘৃণা। গণমাধ্যমের চাপে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ দুটি ঘটনায় দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে চার্জশিট দিতে সক্ষম হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন হওয়ায় এ দুটি ক্ষেত্রেই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়। সমাজ থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর করা ও শিশু-কিশোরদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি খুবই জরুরি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় সমাজের সবার। সমাজে ঠুনকো ঘটনায় শিশু-কিশোর নির্যাতন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App