×

সম্পাদকীয়

পাকিস্তানের রাজনীতি ও ইমরান খানের বিদায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১২:২৯ এএম

পাকিস্তানের রাজনীতি ও ইমরান খানের বিদায়

পাকিস্তানে এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। মনে হচ্ছিল যেন ইমরান খান হয়তো প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই ইতিহাস বদলাতে পারবেন। তিনিও পারলেন না। নানা নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে (পার্লামেন্ট) অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় বিরোধী দলগুলো ক্ষুব্ধ হয়েছে। এতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর বলে শঙ্কা রয়েছে। শনিবার গভীর পাকিস্তান মুসলিম লিগের (এন) সদস্য আয়াজ সাদিকের পরিচালনায় অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ৩৪২ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৭৪ জন ভোট দেন। যদিও বিরোধীদের ১৭২ জনের সমর্থন দরকার ছিল। ইমরান খানের প্রতি সৃষ্ট অসন্তোষের অন্যতম বড় কারণ ছিল পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট। এছাড়া দেশটির দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতিও তার সামনে বড় বাধা ছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক পতন নিহিত ছিল নতুন দুই বাস্তবতার মধ্যে। প্রথমত, পার্লামেন্টে জোট মিত্রদের সমর্থন হারিয়েছিল ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ফলে অনাস্থা ভোটে জয় পেতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন ইমরান। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারানোর কারণেই ইমরান খানের পতন হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে জানা যায়। তবে এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে পিটিআই ও সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ইমরান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ, বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন হাজির করে বিপুলসংখ্যক মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তুখোড় জাতীয়তাবাদী হিসেবে খ্যাতি আর ক্যারিশমা তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যথেষ্ট হলো না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূরণ করতে পারেনি; গত ৭৫ বছরে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। বিশ্বব্যাপী এটি এখন সুবিদিত যে সেনাবাহিনীর হাতেই পাকিস্তানের ক্ষমতার রশি। ইমরান খান সরকারের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত। ইমরান যুক্ত হওয়ায় দলটি ভারী হলেও এক জায়গায় তার সমকক্ষ আর কেউ নেই; এর আগে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীকেই আস্থা ভোটে হেরে গদি ছাড়তে হয়নি। আস্থা ভোটে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ইমরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্তের অভিযোগ তোলেন। ওই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাবটি বাতিলও করে দিয়েছিল। তারপর ইমরানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টও ভেঙে দেন। গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কৌশলগত বিশ্ব রাজনীতিতে দেশটির গুরুত্ব বেড়েছে। অস্থিতিশীল, অগণতান্ত্রিক এবং মোল্লা ও মিলিটারিতন্ত্রের পাকিস্তান বাংলাদেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App