×

খেলা

টাইগাররা বার বার ব্যর্থ কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৭ পিএম

টাইগাররা বার বার ব্যর্থ কেন

পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আউট হয়ে হতাশ তামিম ইকবাল

প্রোটিয়াদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুবাদে প্রশংসায় ভাসছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে টেস্ট সিরিজে লজ্জার হারে প্রোটিয়াদের মাটিতেই অর্জিত অর্জন মলিন করেছে মুমিনুল বাহিনী। হাতে সাত উইকেট নিয়ে সোমবার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বনিম্ন রান সংগ্রহ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরআগে ২০১৮ সালে অ্যান্টিগায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৪৩ রান করেছে। যা টাইগারদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর। এরপর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড। সোমবার শেষ টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অলআউট হয়েছে ৮০ রানে। এর মাঝে ২০০৭ সালে কলম্বোর বিপক্ষে ৬২ রানের রেকর্ডটি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা কেন ব্যর্থ হলো তা নিয়ে চারদিকে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শোচনীয় হার সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা সোমবার ভোরের কাগজকে বলেন, প্রোটিয়াদের স্পিনের বিপক্ষে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। বল বেশ টার্ন করেছে। ব্যাটাররা যদি একটু সামনে বেরিয়ে বল মোকাবিলা করতো তা হলে টার্নে পরাস্ত হতো না। ব্যাটাররা বল নির্বাচনে ভুল করেছে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে অনেকে আউট হয়েছেন। বাইরের বল ছেড়ে দিলে বোলাররা বল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। কেশব মহারাজ এবং হারমারের বল টার্ন করার আগেই খেলতে পারলে রানের চাকা সজল রাখা যেত। আক্রমাত্মক ব্যাটিং করতে পারলে ডারবান এবং পোর্ট এলিজাবেথে হার এড়াতে পারত মুমিনুল বাহিনী। তরুণরা দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সাধারণত শিখে থাকে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টাইগার সিনিয়র ব্যাটাররা হতাশ করেছে সমর্থকদের। উইকেটে গিয়ে তারা শট খেলতে ছটফট করেছে। প্রতিপক্ষের রান তাড়ায় মনোনিবেশ করতে গিয়ে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেননি। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসটা ভালো খেললেও পরের তিন ইনিংস ভালো খেলতে পারেনি মুমিনুল বাহিনী।

সাদা পোশাকে টাইগারদের বাজে অবস্থার কারণ সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, টাইগাররা ওয়ানডেতে দুর্দান্ত দল তাতে সন্দেহ নেই। ওয়ানডে এবং টেস্ট এক নয়। টেস্ট রাজকীয় খেলা। এখানে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। ওয়ানডেতে একজন বোলার দশ ওভারের বেশি বল করতে পারে না। টেস্টে ওভারের কোনো হিসাব নেই। ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে ৯ জন ভেতরে থাকে। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। টেস্টে টাইগারদের ভালো করতে হলে লংগার ভার্সনের ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে হবে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে সোমবার একদিন হাতে রেখেই ৩৩২ রানের জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় দিনের শেষদিকে ৪১৩ রানের টার্গেট দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ডিন এলগার। এরপর শেষ দিকে ২৭ রান তুলতেই টাইগারদের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন কেশভ মহারাজ ও সিমন হারমার। চতুর্থ দিনের ব্যাটিংয়ে নেমে মহারাজের ঘূর্ণিতে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৫৭ রান যোগ করতেই টাইগারদের বাকি ৭ ব্যাটার ফিরেছেন সাজঘরে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছেন লিটন দাস। এরপর ২০ রান করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের দিন তামিম ইকবালের ১৩ রান ব্যতীত রানের খাতা খুলতে পেরেছেন শুধু নাজমুল হোসেন শান্ত (৭), মুমিনুল হক (৫), মুশফিকুর রহিম (১)। ইয়াসির আলী রাব্বি, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ফিরেছেন শূন্য রানে এবং এবাদত হোসেন শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩.৩ ওভার ব্যাট করে মাত্র ৮০ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের হয়ে ৭ উইকেট পেয়েছে কেশব মহারাজ ও ৩ উইকেট পেয়েছে সিমন হারমার।

এরআগে পোর্ট এলিজাবেথে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডারের ব্যাটারদের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৪৫৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে স্বাগতিকরা। এই ইনিংসে টাইগারদের বাঁহাতি স্পিনার ৬ উইকেট পেয়ে একাধিক রেকর্ডে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম, মুশফিক ও ইয়াসির আলী রাব্বির কল্যাণে মাত্র ২১৭ রান করতে পেরেছে। তৃতীয় দিনে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করেই ৪১৩ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় টাইগারদের। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে আজ মাত্র ৮০ রানেই অলআউট হয়ে যায় মুমিনুল বাহিনী। এই ম্যাচে ৯ উইকেট ও পুরো সিরিজে ১৬ উইকেট পাওয়ার সুবাদে ম্যাচসেরা ও সিরিজ সেরা উভয় পুরস্কারই উঠেছে কেশভ মহারাজে হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে প্রথম টেস্টেও ২২০ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ।

সাদা পোশাকে টাইগারদের ব্যর্থতা সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান সোমবার ভোরের কাগজকে বলেন, ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। রঙিন পোশাকে টাইগাররা ভালো ক্রিকেট খেললেও সাদা পোশাকে এখনো শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি। ২২ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেক টেস্ট ম্যাচ খেললেও জয়ের পাল্লা ভারি নয়। হারের সংখ্যা বেশি। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডারবানে ২২০ এবং পোর্ট এলিজাবেথে ৩৩২ রানে হেরেছে মুমিনুল বাহিনী। এ সিরিজে টাইগার ব্যাটাররা ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি। শট সিলেকশনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যে বল ছেড়ে দেয়ার তা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন অধিকাংশ ব্যাটার। মারার বল ঠেকিয়েছেন। বিশেষ করে দুই প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ এবং হারমারের বল খেলতে গিয়ে খাবি খেয়েছে অধিকাংশ ব্যাটার।

সিনিয়র ব্যাটাররা নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বোলাররা যথেষ্ট ভালো বল করেছেন। পেসার খালেদ এবং স্পিনার তাইজুলের প্রশংসা না করলে নয়। এ দুজন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। এবার প্রোটিয়ার সফরে আমাদের ফিল্ডাররা বেশ কিছু সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেনি। নেতৃত্বে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি মুমিনুল হক। সিরিজ হারের জন্য অনেকগুলো ভুলের মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্টে কিছু সিদ্ধান্ত সমর্থকদের হতাশ করেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রোটিয়া আম্পায়াররা বেশ কিছু বাজে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।

সাদা পোশাকে টাইগারদের হতদশা কাটানো সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন, টেস্টে ভালো করতে হলে শক্তিশালী ‘এ’ দল গঠন করতে হবে। তারপর দলটিকে বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বছরজুড়ে খেলার মধ্যে রাখতে পারলে টেস্টে বাংলাদেশও ভালো করবে।

লজ্জার হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল বলেছে, উঁচু মানের স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলি না। আমাদের দুয়েকজন ছাড়া আর কেউ স্পিন খুব ভালো খেলে না। স্পিন কোন দিক দিয়ে কীভাবে খেলতে হবে সেটা হয়তো আমরাও বুঝি না। এসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে। একই সঙ্গে আরো বলেন, আমাদের উইকেট আর এখানকার উইকেটের ভিন্নতা আছে। উপমহাদেশে যারা বোলিং করে তারা সাইড স্পিন করে, যেটা আমাদের দেশে খুব কাজে দেয়। এখানে ওভার হেড স্পিন কার্যকর। আমাদের বোলাররা হয়তো কন্ডিশনের জন্য সাইড স্পিন করে। এখানে এসে ওরা ওভারহেড স্পিন করবে। ওভারহেড স্পিনের জন্য টেকনিক্যাল পরিবর্তন করতে হয়। তখন তার আগের টেকনিকে সমস্যা হতে পারে। আর ঘরোয়া ক্রিকেটের স্পিনার এবং আন্তর্জাতিক স্পিনারের মানে অনেক পার্থক্য আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App