×

মুক্তচিন্তা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং আমাদের দায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ০৪:২৩ এএম

একেবারে সঠিকভাবে বলতে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের একেবারে কিছুই যে দিচ্ছে না তেমন নয়, আমরা সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে যে কারো সঙ্গে সম্পর্কের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারছি, পারছি যে কোনো খবর দ্রুত অবগত হতে। এর বাইরে ব্যক্তিগত সাহিত্যচর্চা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কর্মকাণ্ড সংবাদ একেবারে সেকেন্ডের মধ্যেই পেয়ে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার কারণে অনেক নিরীহ মানুষও অনেক সময় তাদের বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা বিচারও পেয়েছেন এমন নজির অসংখ্য, তবে সবচেয়ে দুঃখ এবং উদ্বেগের বিষয় হলো এ মাধ্যমটিকে অনেক সময় কিছু অসৎ লোক পরিকল্পিতভাবে সমাজে অশান্তি সৃষ্টির জন্য ভুলভাবে ব্যবহার করছে, যা আমাদের কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। অতীতে এমনও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাহা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে অনেক মানুষের জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। সৃষ্টি করেছে ধর্মীয় উন্মাদনা, নিরপরাধ মানুষ খেটেছে জেল, ভেঙেছে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মালয়। এমনও দেখা গেছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু কুচক্রী হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করতে থাকা জায়গাগুলোতেও বিভেদ সৃষ্টি করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এরা কারা? কেনই বা তারা সম্প্রীতির এদেশে বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এমন জঘন্যতম ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, এদের মূল উদ্দেশ্যই বা কী। সত্যিই কি এসব ঘটনার পেছনে বড় কোনো শক্তি কাজ করছে? যদি কোনো শক্তি সত্যি সত্যি এর পেছনে লুকিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে সরকারের উচিত নয় কি- দ্রুত খুঁজে বের করে এদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা? অবশ্য বিগত কিছুদিন আগে এমন কিছু ঘটনার সরকার যতসামান্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকা উচিত। কেউ কোনো একটা স্পর্শকাতর এবং মিথ্যা সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে তা দ্রুত প্রচার না করে কিছু সময় নিয়ে তা ছাড় দেয়া উচিত। অন্তত তেমন একটা অপশন থাকা উচিত, তাহলে যে কেউ ইচ্ছে করলে ভুয়া কোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে হলে সামান্যতম হলেও ভয় পেত কিংবা চিন্তা-ভাবনা করত। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু মিথ্যা এবং বানোয়াট সংবাদ প্রচার করলেও সে সংবাদগুলো অনেকে বুঝে আবার অনেকেই না বুঝে বিশ্বাস করে অন্য মানুষের কাছে দ্রুত ছড়াতে থাকে আর এতে প্রচারকৃত মিথ্যা সংবাদটি অজস্র মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে আর এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষ অনেক সময় ভুল সংবাদটি সত্য হিসেবে ধরে নেয়, যখন এটা প্রমাণ হয় যে সংবাদটি সঠিক ছিল না ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে যায়, এর দায় তখন গিয়ে পড়ে সরকারের ওপর। আমরা যারা যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি আমাদেরও একটা সামাজিক দায় রয়েছে কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের একটি মিথ্যা ভিডিও কিংবা সংবাদ প্রকাশই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট, ফলে যে কোনো সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের আগে আমাদের যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। আর যেসব কুচক্রী যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বারবার রাষ্ট্রে, সমাজ এবং মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সেসব কুচক্রীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমন একটা মাধ্যম, যে মাধ্যমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ। অতএব আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কোনো বিষয় দেব না, যা মানুষের মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গলই বেশি হয়। রতন কুমার তুরী লেখক এবং শিক্ষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App