×

সম্পাদকীয়

ভেজাল ওষুধ বিক্রি : আইনের প্রয়োগ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ০৪:২৪ এএম

মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল-ভেজাল ওষুধের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়। মোট ওষুধ বিক্রির প্রায় ২০ শতাংশ। সম্প্রতি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ১০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে বছরে ৩০০ কোটি টাকার ভেজাল ওষুধ তৈরি হয়। দেশের ওষুধ-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে মোট উৎপাদিত ওষুধের অন্তত ২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি বছর ৩০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হয়। নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করে। অনেক সময় এসব ওষুধে উৎপাদন ও মেয়াদের শেষ তারিখও থাকে না। আর এসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে। সারাদেশে এমন ফার্মেসির সংখ্যা আরো বেশি হবে। এসব ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। মানসম্পন্ন ওষুধ যেমন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, তেমনি মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ স্বাস্থ্যহানি এমনকি জীবননাশের কারণও হতে পারে। কাজেই ওষুধের মান সংরক্ষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য খাদ্যপণ্যের মতো ওষুধের গুণমান ভোক্তাদের নিজেদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয় না। এ কাজটির জন্য অপরিহার্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো- মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রোধে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা অপর্যাপ্ত। মাঝেমধ্যে আমরা অভিযান দেখি। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় নকল ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগে ওয়েস্ট আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরিজ কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কারখানাটির মালামালও। পুলিশের তথ্য মতে, ওই কারখানা থেকে উৎপাদিত ওষুধ দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধ মার্কেট মিটফোর্ড এলাকায় পৌঁছে যেত। অধিদপ্তর সূত্র বলছে, অসাধু বিক্রেতারা অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের গায়ে নতুন করে মেয়াদ সংবলিত স্টিকার লাগিয়ে তা বিক্রি করে। এছাড়া অনেক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা ওষুধের প্যাকেটে কোনো ধরনের উৎপাদন তারিখ বা মেয়াদের তারিখ থাকে না। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়া হচ্ছে মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। মিটফোর্ডে গিয়ে মোবাইল কোর্টেরও হেনস্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকজন এই নকল-ভেজাল ওষুধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। এ খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ। অন্যদিকে আইনে এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি কম হওয়াও বড় কারণ। ওষুধের বাজার ভেজালমুক্ত করা খুবই জরুরি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে তৎপর হওয়া দরকার। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে আইন কঠোরও করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের তৎপরতায় দুর্নীতি, শিথিলতা রাখা যাবে না। সর্বোপরি নকল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদক-বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার সরকারের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App