×

সম্পাদকীয়

দেবাশিষ, রসরাজের পর হৃদয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০১:১২ এএম

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক তিনি। ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বাদী হয়ে হৃদয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই নিয়ে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগের ফাঁদে ফেলে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এর আগে ষড়যন্ত্র করে পটুয়াখালীতে দেবাশিষকে ফাঁসানো হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রসরাজকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে। ঘটনাগুলো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করে তা রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর প্রধান শিক্ষক বরাবর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে লিখিতভাবে। কোচিং করানো এক ব্যক্তি ছাত্রদের ব্যবহার করে হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসাতে এই কাজ করিয়েছে। আর সে কারণে বিজ্ঞান ক্লাসে এক ছাত্র বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করে যাচ্ছিল শিক্ষককে ফাঁদে ফেলতে। এমনকি ছাত্রদের বিক্ষোভও করিয়েছে একটি মহল। এতে বিষয়টি স্পষ্ট যে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্যের যে প্রকাশ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা লক্ষ করছি, ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে- এই জিকির তুলে স্বার্থান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাঝে মাঝেই ধর্মপ্রাণ নিরীহ মানুষকে এমনভাবে উত্তেজিত করছে যে, তারাও হয়ে পড়ছে উন্মত্ত। সত্যি সত্যি ধর্মের অবমাননা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না অথবা হলেও প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে টার্গেট হয়ে পড়ছে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রায়ই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সংখ্যালঘু মানুষের ওপর এ রকম আক্রমণ জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত। এ হামলার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাসের যে সংস্কৃতি তা বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা, তাকে জামিন না দেয়া ও টিপ পরায় কলেজশিক্ষক লতা সমাদ্দারকে লাঞ্ছনার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন। তারা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। একজন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য এভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সমাজে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। আমরা মনে করি অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখা দরকার। যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের সপরিবারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App