পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) মাঠে নামছে টাইগাররা। প্রোটিয়াদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে জিতে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারলেও দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। শুক্রবার সিরিজে সমতা ফেরানোর মিশন মুমিনুল বাহিনীর। ডারবার টেস্টে লজ্জাজনক হারের দুঃস্মৃতিকে পেছনে ফেলে পোর্ট এলিজাবেথে টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নতুনভাবে শুরু করতে মুখিয়ে আছে টাইগাররা। টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায়। টি স্পোর্টস, গাজী টিভি ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বাংলাদেশ দলে শুক্রবার বেশ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম টেস্টে স্পিন আক্রমণ দিয়ে বাংলাদেশকে ঘায়েল করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা প্রোটিয়াদের মতো পেসনির্ভর দেশের খুবই বিরল। যদিও নিজেদের প্রথম সারির পেস আক্রমণকে পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু কেউই ভাবেনি, দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সিমন হারমার এবং কেশব মহারাজ বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন বয়ে আনবেন।

[caption id="attachment_343818" align="aligncenter" width="700"] পোর্ট এলিজাবেথে বৃহস্পতিবার অনুশীলনে ঘাম ঝরায় টাইগাররা। ছবি: ইন্টারনেট[/caption]

দেশের জন্য এমন হার এতটাই হতাশাজনক, অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেন, বিদেশের মাটিতে স্পিনারদের উইকেট দেয়া একটি অপরাধ। ২০১৫ সালের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা হারমার ও মহারাজ দুজনে মিলে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ১৪টি উইকেট শিকার করেন। ঘরের মাঠে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর সর্বোচ্চ শিকার।

চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক, পেসারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে ঢেঁকে দিয়েছে। ডারবান টেস্ট হেরে যাওয়ার পর মুমিনুল সরাসরি স্লেজিং নিয়ে অভিযোগ না তুললেও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের বিপক্ষে ‘গালিগালাজ’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ক্রিকেট মাঠে স্লেজিং সব সময় হয়। সেøজিং হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্লেজিং যখন গালাগালির পর্যায়ে চলে যায়, এটা খুব খারাপ। আমার মনে হয়েছে, মাঝেমধ্যে ওরা গালাগালি করছিল, খুব বাজেভাবে। যেটা আম্পায়ার ওইভাবে খেয়াল করেননি।

ডারবানের কিংসমিড টেস্টে পেটের পীড়ায় খেলতেই পারেননি তামিম ইকবাল। শুক্রবার পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে খেলতে নামবেন বাংলাদেশ দলের সেরা ওপেনার। এ প্রশ্ন যখন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক জানিয়েছেন, খেলবেন তামিম। তিনি সুস্থ আছেন। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল বলেন, তামিম ভাইর কন্ডিশন আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। আমরা পরের ম্যাচে খেলার জন্য আশাবাদী, ইনশাল্লাহ তিনি খেলবেন।

[caption id="attachment_343820" align="aligncenter" width="700"] ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস তাই বৃহস্পতিবার ক্যাচ অনুশীলনে টাইগাররা। ছবি: ইন্টারনেট[/caption]

গত বছরে মে মাসে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর আর তার টেস্ট খেলা হয়নি। এখনো পর্যন্ত ৬৪ টেস্ট খেলে তামিম ইকবাল ৩৯.৫৭ গড়ে রান করেছেন ৪৭৮৮। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ৯টি, হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি। সর্বোচ্চ রান ২০৬। তামিম ফেরায় বাদ পড়বেন সাদমান ইসলাম। ডারবান টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। আউট হন শূন্য রানে। আর তাসকিনের জায়গায় পেসার খেলবে না স্পিনার তা এখনো নিশ্চিত নন অধিনায়ক। উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে মুমিনুল বলেন, তাসকিনের জায়গায় একজন পেস বোলার অথবা স্পিনার নেয়া হতে পারে, তবে উইকেট না দেখে সেটা বলতে পারছি না।

কাঁধের চোট নিয়ে ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করেছেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ছিটকে যান দ্বিতীয় টেস্ট থেকে। চোটের কারণে তার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন শরিফুল ইসলামও। বাংলাদেশ যদি তিন পেসার নিয়ে খেলে তাহলে তার পরিবর্তে দলে দেখা যেতে পারে আবু জায়েদ রাহী কিংবা শহিদুল ইসলামকে। আর দুই পেসার নিয়ে খেললে একাদশে আসতে পারেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুইটি জয় ও ২১টি হার বাংলাদেশের। এবারের সফরের শুরুতে ওয়ানডে সিরিজে পাওয়া দুটি জয়ই, এখন পর্যন্ত বড় অর্জন টাইগারদের।

তবে পরিবেশ অচেনা হলেও সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জয় পেতে মরিয়া বাংলাদেশ। সিরিজ হার এড়াতে জয় ছাড়া বিকল্প পথ নেই টাইগারদের।

বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়, আর এবারের দক্ষিণ আফ্রিকার সফরের শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়ে, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। ডারবানের কিংসমিডে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারলেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষটা রঙিন করতে চায় বাংলাাদেশ। এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট বাংলাদেশের দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল নতুন ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ টেস্টে মুশফিকুর রহিম ১২০ ও তামিমের ২১২ রান করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজারি ক্লাবের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হবে।