×

সারাদেশ

ধর্মপাশা ও শাল্লায় হাওর ডুবে কৃষকের সর্বনাশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২২ এএম

ধর্মপাশা ও শাল্লায় হাওর ডুবে কৃষকের সর্বনাশ

সোমবার রাত থেকে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল ও শাল্লার পুটিয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে যায়। ছবি: ভোরের কাগজ

ধর্মপাশা ও শাল্লায় হাওর ডুবে কৃষকের সর্বনাশ

সোমবার রাত থেকে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল ও শাল্লার পুটিয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ডুবেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। ছবি: ভোরের কাগজ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল ও শাল্লার পুটিয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার কৃষকের স্বপ্ন ডুবে গেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ দুই বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবল বেগে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় হাওর। বাঁধ ভেঙে যাবার পর সন্ধ্যায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলের পাশপাশি রাজাপুর বাজারে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুব্ধ কৃষকরা বাঁধের কাজে অনিয়ম হওয়ায় তাদের সর্বনাশ হয়েছে বলে দাবি করেন।

গত সোমবার রাত থেকে এ হাওরের ডুবাইল অংশের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধে ধ্বস শুরু হয় এবং বাঁধের নিচ দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। স্থানীয় কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বাঁধ আটকে রাখেন।

[caption id="attachment_343546" align="aligncenter" width="700"] সোমবার রাত থেকে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল ও শাল্লার পুটিয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ডুবেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

হাওর পার্শ্ববর্তী জৈনপুরের গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া জানালেন, শত শত ২০ ঘণ্টা কৃষক এ বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। কংস নদের পানি কূল উপচে হাওরে ঢুকে ফস তলিয়ে যায়। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম এই বাঁধ পরিদর্শন করেন এবং বাঁধ রক্ষায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

একই গ্রামের কৃষক কাঞ্চন ও শাহীন আলম নিজেদের সর্বনাশের কথা জানিয়ে বলেন, এ ক্ষতি পূরণের ক্ষমতা নেই তাদের। কাঞ্চন বললেন, দুই লাখ টাকা ঋণ এনে জমি করেছেন তিনি। এখন ঋণ দেবেন কিভাবে, পরিবারের কি অবস্থা হবে। কৃষক শাহীন আলম বললেন, পাঁচ একর জমির সবই পানিতে ডুবেছে।

কৃষকরা আরও জানান, এ হাওরের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধ দুর্বল হবার কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন তারা।

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুবেল আহমদ এ বাঁধ ভাঙায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টার কিছু অংশের ফসল ডুবে যাবে বলে জানান। তার দাবি বাঁধ ভাঙায় কমপক্ষে ২০০০ হেক্টর ফসল ডুববে। তিনি বলেন, ১০-১২ দিন আগে এ বাঁধের কাজ হয়েছে। বাঁধের কাজ করেছে দয়ালপুর গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। সে কৃষক নয়, তাকে কিভাবে কাজ দেয়া হলো আমরা জানি না। অসময়ে এ বাঁধ হওয়ায় পানির প্রথম ধাক্কায়ই ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোকারম হোসেন বললেন, বাঁধের যে অংশে ফাটল ধরেছিল, সেই অংশ মেরামত করতে করতে বিকালে অন্য অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু হয়। তিনি বললেন, বাঁধের কাজ কারা করেছে আমি জানি না, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার আগেই কাজ দেওয়া হয়েছে।

ধর্মপাশার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনতাসির হাসান প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে কারা ছিল এ বিষয়ে কাগজ না দেখে বলা যাবে না জানিয়ে বললেন, বাঁধের কাজ ঠিকঠাকভাবেই হয়েছিল।

সন্ধ্যায় বাঁধের পাশের সুখাইড় রাজাপুর বাজারে বিভাগীয় কমিশনার মোশাররফ হোসেন ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গেলে অর্ধশতাধিক কৃষক ক্ষুব্ধ হয়ে বাঁধের কাজ অসময়ে হয়েছে। দুর্বল হয়েছে। নীতিমালা অমান্য করে অকৃষকদের বাঁধের কাজ দেওয়ায় তাদের সর্বনাশ হয়েছে দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালেও বাঁধের কাজ না হওয়ায় প্রথম ধাক্কায় সুনামগঞ্জের চন্দ্র সোনার তাল হাওর ডুবেছিল। এদিকে, জেলার শাল্লার পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে প্রায় ২০০ একর ফসল তলিয়ে গেছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ বাঁধ ভেঙে যায়।

শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু জানালেন, দাড়াইন নদীর পানি কূল উপচে মুক্তারপুর সেতুর পাশের বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে। এ বাঁধও সকাল থেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলেন কৃষকরা। কৃষকদের ২০০ একর জমি পানিতে ডুবেছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা সকাল থেকে জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ, ক্লোজার পরিদর্শন করছি। ধর্মপাশা থেকে যখন আমরা তাহিরপুরের দিকে যাচ্ছিলাম তখন খবর পেলাম ডুবাইল বাঁধটি লিকেজ হয়েছে। আমরা এখানে ফিরে আসতে আসতে বিশাল অংশ ভেঙে যায়। ডুবাইল হাওরে কৃষকরা ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা করেছিলেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ১৫ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। এখন ১৮৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডুবাইল হাওরের পার্শ্ববর্তী হাওরের নাম চন্দ্রসোনার থাল হাওর। সেই হাওরে দুই হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সেই ধান পাকতে আরো সময় লাগবে। জেলা প্রশাসক বলেন, মাইকে আমরা গ্রামবাসীকে আহ্বান জানিয়েছি, বাঁধ রক্ষা করার জন্য, গ্রামবাসীরা কোদাল নিয়ে আসছেন। এলজিইডির সাবমার্সিবল সড়কটি মাটি দিয়ে উঁচু করা হবে এবং কার্লভার্টের নিচে মাটি দিয়ে আটকে দেয়া হবে। যাতে আমরা জমির ধান রক্ষা করতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে এখানে অনেক মানুষ উড়া কোদাল নিয়ে জড়ো হয়েছেন রাতেই মাটি কাটা শুরু হবে। আমরা আশা করি রাতের মধ্যে এলজিইডির সাবমার্সেবল রাস্তাটি উঁচু করে ফেলতে পারবো। আমরা এটি করতে পারলে চন্দ্রসোনার থাল হাওরের দুই হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ধান রক্ষা করতে পারবো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পিআইসি গঠনে এবং বাঁধ নির্মাণ কাজে যদি কোন অনিয়ম থাকে, তাহলে আমি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যারা যারা এতে দোষি সাব্যস্ত হবেন এবং যারা কর্তব্য অবহেলায় অভিযুক্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। সরকারি কর্মকর্তা হলে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করবো এবং পিআইসি হলে সরাসরি মামলা করা হবে। এছাড়া জনপ্রতিনিধি দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে সুপারিশ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App