×

সারাদেশ

ছাতকে ৩০ হেক্টর বোরো পানির নিচে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৫:০৭ পিএম

ছাতকে ৩০ হেক্টর বোরো পানির নিচে

বুধবার সুনামগঞ্জের ছাতকে ৩০ হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। ছবি: ভোরের কাগজ

সুনামগঞ্জের ছাতকে পাহাড়ি ঢলে উজানের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩০ হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢল উজানের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ফসল রক্ষার বাঁধ, নদী বাঁধ অতিক্রম করে পানি ডুকে কৃষকের ঘুম কেড়েছে । তাই বোরো ফসল নিয়ে হাওর পাড়ের কৃষকের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বুধবার (৬ এপ্রিল) বাঁধ রক্ষায় রাতের অন্ধকারেও সারারাত কৃষক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাঠে কাজ করেছেন ছাতকের ইউএনও মো. মামুনুর রহমান।

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে ৬৮টি হাওর রয়েছে। এরই মধ্যে অন্তত ২০টি হাওরের ৩০ হেক্টর বোরো জমির ফসল তলিয়ে গেছে। প্রায় ৫০ হেক্টর বোর ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে এমনই ধারণা ছিল কৃষকের বলে জানা গেছে। গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢল ও বাংলাদেশ ভারতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়ানই নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনর্নির্মানের সুযোগ পাওয়া যাইনি বলে জানিয়েছে হাওর পাড়ের কৃষক।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, জাওয়া ইউনিয়নের ১৮নং পিআইসি বাধ দিয়ে পানি ঢুকেছে বাকি বাঁধ দিয়ে পানি না ঢুকার জন্য সব ধরনের পরামর্শ দিয়েছি এবং ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় কৃষক পরামর্শ মতোই তাৎক্ষণিক কাজ করে বেশিরভাগ বাঁধ পুনর্নির্মান করে পানি আটকে ফসল রক্ষা করতে পেরেছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের যমুনা খাই হাওর, পাতলা চুরা হাওর, দলা হাওর, নোয়ারাই ইউনিয়নের চাউলীর হাওর, ইসলামপুর ইউনিয়নের নলখাই হাওর, মুতিয়ার হাওর ও ছৈদাবাদ গ্রামের পুবের হাওর, পানি প্রবেশ করেছে। হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মুর্তার হাওর, নোয়ারাই ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, কুইয়াদল হাওর, চাতল হাওর, চন্দাই হাওর, গোয়ালকই হাওর, ছাতক সদর ইউনিয়নের বড়বাড়ি হাওর, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের জুলিয়া হাওর, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের তালের হাওর, উত্তর খুরমার ডেকার হাওর, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের জুলিয়ার হাওর, রাখা হাওর, চরমহল্লা ইউনিয়নের চৌলার হাওর, ডাবনিকান্দির হাওর, বুরাইগিরী হাওর, মৌয়ালু হাওর, ঝালিয়ার হাওর, জাউয়া ইউনিয়নের কুঁড়িবিল ও সুড়িগাঁও হাওর, সিংচাপইড় ইউনিয়নের ইন্দুয়ার হাওর, পাটরি হাওর, কুমারকান্দ হাওর, দোলারবাজার ইউনিয়নের চাতলবিল হাওর, পাঁচবিল হাওর, দশমিশা হাওর, ভাতগাঁও ইউনিয়নের খঞ্জনপুর হাওর, হিলিকুঁড়ি হাওর ও কাচি হাওর এসব হাওর শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

জাউয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানান, নোল্লার হাওর, রাউলি ও কাইতকোনা হাওরের ছয়টি বাঁধ আমাদের নিজেস্ব অর্থায়নে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে ইউএনও সাহেবের সুপরামর্শে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে পানি আটকাকে সক্ষম হই।

তিনি আরও জানান, ইউএনও সাহেবকে বাঁধ অতিক্রম করে পানি ঢোকার বিষয়টা যখন জানাই তিনি বলেন সরকারি সহায়তার দিকে এখন না তাকিয়ে দ্রুত বাধ নির্মান করার জন্য। তিনি এ বিষয়ে নিজেই পরে দেখবেন। তার পরামর্শে আমরা তা দ্রুত করতে পেরেছি।

ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. সুফি আলম সোহেল জানান- আমার ইউনিয়নটি হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকায়। পাহাড়ি ঢল নামার সাথে সাথে নদীর বাধ, পিআইসি বাধ অতিক্রম করে দ্রুত ফসলগুলো তলিয়ে যায়। পুনঃসংস্কারের কোনো সুযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন- কাজিরগাওঁ, বনগাওঁ, দারগাকালি, নিজগাওঁ, বাগানবাড়ী, গাঙপাড়, নোয়াকোট, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর, হাদা চাঁনপুর এসব এলাকার নদী তীরবর্তী ও পিআইসি বাঁধ পুনঃসংস্কার জরুরি। নয়তো প্রতিবছর কৃষকের চোখের জল দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।

চরমহল্লা ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদ তালুকদার জানান- মসজিদের মাইকে মাইকিং করে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন কেহ ঘরের টিন, কেহবা বাঁশ, কাট পলিথিন নিয়ে জড় হলে মাঠি ফেলে বড়হাটি ও বাগাছাড়া হাওর বাধ নির্মান করে পানি আটকানো সম্ভব হয়। তিনি আরও জানান বাগাছড়া হাওরের পিআইসি বাঁধ নির্মাণ জরুরি নয়তো প্রায় ৪০ একর বোরো ফসল অনিশ্চতায় মুখে পড়বে।

সিংচাপইর ইউনিয়ন হাটার হাওর বাঁধ নির্মানের স্বেচ্চাসেবী হুসাইন আহমদ জানান- আমাদের গ্রামের কৃষক, মুরব্বিরা, যুবক ভাইরা নিজেদের অর্থে গভীর রাত পর্যন্ত হাটার হাওয়ের বাধের একটি অংশে পুনঃনির্মাণ করি। এবং পানি অাটকাতে সফল হই। কৃষকরা তবুও অনিশ্চতায় আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান জানান, চলতি বোরো মৌসুমে এখানে ১৪ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কর্তন করা হয়েছে প্রায় পাঁচ হেক্টর জমির ফসল। আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান সহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App