×

জাতীয়

সংসদে বৈষম্যবিরোধী আইনের খসড়া, প্রবল আপত্তি হারুনের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০২:৪৫ পিএম

সংসদে বৈষম্যবিরোধী আইনের খসড়া, প্রবল আপত্তি হারুনের

জাতীয় সংসদ। ফাইল ছবি

সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সংসদে একটি বৈষম্যবিরোধী আইনের খসড়া প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে সেটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বিলটি উত্থাপনের অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আপত্তি তোলেন। হারুনুর রশীদ বলেন, এ বৈষম্যবিরোধী বিলের কী প্রয়োজন পড়েছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে তার আপত্তি সংসদের ভোটে টেকেনি।

হারুন ‘পাবলিক প্লেসের’ সংজ্ঞায় ধর্মীয় উপাসনালয় রাখার বিরোধিতা করে বলেন, ধর্মীয় উপাসনালায় পাবলিক প্লেস নয়। মসজিদে ভিন্ন ধর্মের কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। বিলে বলা হয়েছে ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ করতে না দিলে বৈষম্য হবে- এর ব্যাখ্যা চান হারুন। প্রস্তাবিত আইনের ৩ (ঘ) ধারার বিষয়ে তিনি বলেন, শিশুর পরিচয় থাকতে হবে। বাবার পরিচয়ে সমস্যা থাকলে মায়ের পারিচয় থাকতে হবে। নানা-নানি তো থাকবে। এ বিধান থাকলে ব্যাভিচারকে প্রশ্রয় দেয়া হবে। বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন। প্রতি তিন মাসে এ কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো বৈষম্যমূলক কাজ ঘটলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দায়েল করতে পারবে। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনা প্রমাণ হলে অভিযুক্তর সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। এ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দায়েল করতে পারবে। এ কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় কমিটি যদি প্রতিকার করতে না পারে তবে আদালতে মামলা দায়েল করা যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যাই থাকুক না কেন মামলা দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় পাবে আদালত।

বিলের ওই ধারায় বলা হয়েছে, উপযুক্ত কারণ ব্যতীত মাতা-পিতার পরিচয় প্রদানে অমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি, অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধিনিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না।

বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিধানেও আপত্তি করেন হারুন। তিনি বলেন, একটি অ্যাপার্টমেন্টে অনেক মানুষ থাকে। তারা যদি কারও বিষয়ে আপত্তি দেন। তারা যদি মনে করেন কোনো ব্যক্তি থাকলে তাদের সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে কী হবে। হারুন এসময় অভিযোগ করেন দেশে আইনের শাসন নেই। গুম, খুনের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিএনপি করে দেখে চাকরি হচ্ছে না। এখানে রাষ্ট্র বৈষম্য করছে। রাষ্ট্র বৈষম্য করলে কী হবে সেটি বিলে বলা নেই।

হারুন বলেন, বিলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না বলা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানের নামে যদি বেলেল্লাপনা হয় তবে কী হবে? কিছুদিন আগে দেখলাম তাপস নামে একজনের সন্তানের বিয়েতে পর্নো তারকা আসলো। অনুষ্ঠান করে চলে গেল। তথ্যমন্ত্রী বললেন, তার আসার অনুমতি নেই। কিন্তু পর্নো তারকা এসে অনুষ্ঠান করে চলে গেল।

জবাবে যা বললেন আইনমন্ত্রী

জবাব দিতে উঠে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিলটি কমিটিতে গেলে তিনি যা যা বললেন তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আবার সংসদে আসবে। আবার আলোচনা হবে। তবুও জবাব দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার নিয়ে তিনি (হারুন) যে উদ্বিগ্ন তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি এমন একটি দলের সদস্য যে দল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অন্য দলের সব নেতানেত্রীকে এবং জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ মালিক। উনি বেঁচে গেছেন। সেই দলের একজন সংসদ সদস্য আমাকে মানবাধিকার শেখাচ্ছেন।

আনিসুল হক বলেন, তার কাছ থেকে আমার মানবাধিকারের শিক্ষা নিতে হবে না। আমার মানবাধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে। তিনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন সময় হলে অবশ্যই জবাব দেবো। এখানে বক্তৃতা দিয়ে তারপর একটা সংকট সৃষ্টির যে হুমকি দিলেন হারুন, আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আর বোকা নেই। তাদের এসব কথায় আর কাজ হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App