×

সাহিত্য

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা প্রাঙ্গন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩০ পিএম

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা প্রাঙ্গন

চারুকলা প্রাঙ্গনে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। ছবি: ভোারের কাগজ

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা প্রাঙ্গন
মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা প্রাঙ্গন
মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা প্রাঙ্গন

চারুকলা প্রাঙ্গনে পা রাখতেই দেখা গেল বাঁশ-পেরেকের ঠুকঠাক শব্দ, আবার কোথাও গভীর মনোযোগে মাটির সরায় তুলির আঁচড় দিতে। কেউ বানাচ্ছেন কাগজের পাখি, বাঘ, রাজা, রানি ইত্যাদি। দূর থেকে ভেসে আসছে গানের সুর।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অঙ্গণের ব্যস্ততার চিত্র এটি। এই ব্যস্ততা চলবে আগামী ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত। কারণ পরের দিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ বা পয়লা বৈশাখ।

জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ভোরের কাগজকে বললেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা সীমিত আকারেই হবে এবং সকাল ৯টাতেই শুরু হবে। তবে শোভাযাত্রা শুরুর স্থানটি পরিবর্তন হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে যেহেতু চারুকলার সামনের রাস্তা সংকুচিত হয়ে থাকায় শোভাযাত্রাটি শুরু হবে চারুকলার সামনের রাস্তার বদলে টিএসসি থেকে। পরে এটি উপাচার্যের বাসভবনের মোড়টা ঘুরবে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য- ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’।

তিনি বলেন, রজনীকান্তের এই গানটির লাইন থেকে আমরা শুধু প্রথমের ‘তুমি’ শব্দটা বাদ দিয়েছি। এর মধ্য দিয়ে করোনাকালীন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির বারতা দেয়া বা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ম্যাসেজ দেয়া চেষ্টা।

বাঙালির সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ দোরগোড়ায়। আর মাত্র ৮ দিন। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে আনন্দে মাতবে সারা দেশ। আর বর্ষবরণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুষ্ঠানিকতা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা এখন বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার রাজপথে নামবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তার প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে।

চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। জয়নুল গ্যালারির মুখে দেখা গেল ছবি আঁকছেন একদল শিক্ষার্থী। জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম আঁকছেন তারা। পাশেই আরেক দল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন মাছ-ময়ূর-পাখির মুখ, কেউবা আঁকছেন ফুল-লতাপাতাসহ নানা মোটিভ।

আরেকদল শিক্ষার্থীকে দেখা গেল বর্ণিল বাঘ-সিংহ-হাতি ও পেঁচাসহ নানা কিছু লোকজ ফর্মের মুখোশে রঙ করতে ব্যস্ত। চারুকলার জয়নুল স্কুল ঘরে গিয়ে দেখা গেল অন্যচিত্র। যেখানে আরেকদল শিক্ষার্থী মাউনবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট পাখি বানাচ্ছেন। একইসঙ্গে তাতে রঙ লাগানো হচ্ছে। সে সঙ্গে রয়েছে হাতপাখা আর চরকি।

অন্যদিকে মাঠের মধ্যে বাঁশ দিয়ে কিছু হাতির কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন মিস্ত্রি ও শিক্ষার্থীরা। এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের একজন ভাস্কর্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী চিন্ময় ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বড় আকারের একটি ঘোড়ার কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছে।

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার এসব কর্মযজ্ঞের দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলার ২২ ও ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এসব কাজকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- স্ট্রাকচার, পাখির অরিগামি, মুখোশ এবং সরাচিত্র ও পেন্টিং।

তিনি বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার পাঁচটি বড় মোটিভ থাকবে। এসবের মধ্যে রয়েছে ঘোড়া, পাখি ও টেপা পুতুল। বাকি দুটি মোটিভ ঠিক হয়নি। বাকি এই তিনটির কাজ আমরা শুরু করেছি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহের জন্য চারুকলায় শুরু হয়েছে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহনে সপ্তাহব্যাপী ছবি আঁকা কর্মশালা এবং চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আবুল বারাক আলভী। সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ, কনকচাঁপা চাকমা, ফরিদা জামান, মোস্তাফিজুল হক, মোহাম্মদ ইকবাল, আব্দুল মান্নান, শিশির ভট্টাচার্য, অনুকুল চন্দ্র, মুস্তাফিজুল হক, শেখ আফজাল, রনজিৎ দাশ, অলকেশ ঘোষ, গুলশান হোসেইনসহ অন্যান্যরা।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, টিপকাণ্ডে মৌলবাদীরা বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দ্বার করিয়ে দিয়েছে। এটির কারণে এবারের পহেলা বৈশাখ আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি বাংলাদেশের জনগণ প্রথমত বাঙালি। তারপরে যার যার ধর্মে বিশ^াস করবে। এবং সেই ধর্মে আচার থাকবে, অনুষ্ঠান থাকবে। সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।

তিনি বলেন, টিপ যে পরবে তার অধিকারে সে টিপ পরবে। তার নাগরিক অধিকার তার ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অধিকার রয়েছে। আমাদের সংবিধান আমাদের প্রত্যেকের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবেপ্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু মানুষ এবং সরকারি কর্মকর্তা তারনানাভাবে আমাদের বাঙালি সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু চারুকলার নতুন প্রজন্ম আমাদের দায়িত্ব তােেদর কাধে তুলে নিয়েছে। আমি আশাবাদী তাদের কর্মকাণ্ডে।

নববর্ষ উদযাপনে বাড়তি সতর্কতায় ঢাবি

এদিকে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং মেট্রোরেলের চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে আনন্দময় পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপনের জন্য উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য এই আহ্বান জানান।

সভা-পরবর্তী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।

পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App