×

জাতীয়

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল পাস, অনিয়ম করলে কারাদণ্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৩:০৬ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল পাস, অনিয়ম করলে কারাদণ্ড
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল পাস, অনিয়ম করলে কারাদণ্ড

বন্দর ভবন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় অনিয়ম করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল-২০২২ পাস করেছে জাতীয় সংসদ। আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল-২০২২ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। বিরোধীরা এতে প্রবল বিরোধিতা করেন। কিন্তু কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ করে পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন।

১৯৭৬ সালের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন করতে গতবছর ১৫ নভেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের শাস্তি এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। বন্দরের ভাড়া ও টোল আদায়ের বিষয়ে সরকারের কাছে অনুমোদন নিয়ে তফসিল করতে হবে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়যোগ্য ভাড়া, টোল, রেইট, ফি ও মাশুল মওকুফের ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে না।

বন্দরের উন্নয়ন সম্প্রসারণে একটি তহবিল করার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে। বন্দর পরিচালনার জন্য একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অনধিক চার সদস্যের একটি পরিচালনা প্রশাসন বোর্ড রাখা হয়েছে। প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি বোর্ড সভা করার বিধান থাকলে আইনে।

বিলে বলা হয়েছে, বন্দর এলাকায় কোনো জাহাজ বা যান্ত্রিক উপকরণের কারণে যদি বর্জ্য তৈরি হয়, তবে তার মালিককে বা মাস্টারকে বা প্রতিনিধিকে তা অপসারণ করতে হবে। অপসারণে সময়সীমা অতিক্রম করলে মাশুল দিতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই বর্জ্য অপসারণ করবে। এর জন্য যে খরচ হবে, তা দ্বিগুণ দায়ীকে দিতে হবে। কোনো ভাড়া, জরিমানা, ফি, টোল, মাশুল বা ক্ষতিপূরণ অনাদায়ী থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তার নিয়ন্ত্রণে থাকা পণ্য নিলাম করে অর্থ আদায় করতে পারবে। কোনো জাহাজের মাস্টার বা জাহাজে কর্মরত কারও অবহেলার কারণে যদি ডক, পিয়ার বা কোনো স্থাপনা বা কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষতি হয়, সেজন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করার সুযোগ থাকছে নতুন আইনে।

এ বিলের অধীন অপরাধগুলো ভ্রাম্যমান আদালতে বিচার করা যাবে বলে বিধান রাখা হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এ বিলের অধীনে সংঘটিত কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না।

বিরোধীরা যা বলছেন

বিল নিয়ে আলোচনার সময় ৭০ অনুচ্ছেদ বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তিনি এ প্রথম দেখলেন সংসদীয় কমিটি কোনো বিলে নতুন ধারা যুক্ত করেছে। কমিটি এটা করতে পারে কিনা সে বিষয়ে স্পিকারের রুলিং চান তিনি। পরে এ নিয়ে জবাব দিতে দাঁড়িয়ে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ সংসদের ক্ষমতা সম্পর্কে বলেন।

শামীম আরও বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ কেন এসেছে তা নিয়ে তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেখা গেল সংসদ সদস্যদের কেনাবেচা হতো। এ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা হল দলের বিরুদ্ধে ভোট বা কোনো কথাই বলা যাবে না। এর ফলে সংসদে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে না।

সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপনের সময় জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংসদের কি খুব বেশি ক্ষমতা আছে? যিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, তার হাতেই সব ক্ষমতা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কারও কিছু বলার ক্ষমতা আছে? সদস্য পদ কি থাকবে? তিনি বলেন, যতক্ষণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে ততক্ষণ সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা নেই। বাজেটে সংসদ সদস্যদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা কতটুকু আছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিলের ৪৬, ৪৭, ৪৮ ধারা যেগুলো সংসদীয় কমিটি যুক্ত করেছে বিলের মধ্যে। যদিও এগুলো আমলারা করলে তা কমিটির বাদ দেয়ার কথা কিন্তু তা না করে সংসদীয় কমিটি যুক্ত করেছে। যা সংবিধান বিরোধী ও জনস্বার্থবিরোধী। আমলারা এ ধারাগুলো তৈরি করলেও সংসদীয় কমিটির তা বাদ দেয়ার কথা। তা না করে তারাই এগুলো যুক্ত করেছে। যা জনস্বার্থবিরোধী।

যদিও সংসদে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App