×

খেলা

আবাহনীর কাছে পাত্তা পেল না মোহামেডান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪০ পিএম

আবাহনীর কাছে পাত্তা পেল না মোহামেডান
আবাহনীর কাছে পাত্তা পেল না মোহামেডান

আবাহনীর হয়ে খেলাটা জম্পেশ উপভোগ করলেন হনুমা বিহারি। ছবি: সংগৃহীত

আবাহনীর কাছে পাত্তা পেল না মোহামেডান

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মঙ্গলবার মোহামেডানের বিপক্ষে রানের জন্য প্রান্ত বদল করছেন আবাহনী লিমিটেডের আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

আবাহনী-মোহামেডান মর্যাদার লড়াইয়ে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সাদা-কালো জার্সিধারীদের হারিয়েছে আকাশি-নীলরা। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারানোর কারণে হাত খুলে রানের গতি বাড়াতে না পারার খেসারত দিয়েছে শুভাগত হোমের মোহামেডান। ২৫৫ রান নিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি সাদা-কালোদের। ৬ উইকেটের অনায়াস জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী। ঘরোয়া ক্রিকেটে এক সময় আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথ নিয়ে বাড়তি আকর্ষণ থাকত। থাকত উন্মাদনা। কিন্তু সময়ের খরস্রোতে সেই উন্মাদনায় পড়েছে ভাটার টান। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে সমর্থকদের আগের সেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। মঙ্গলবার নিরুত্তাপ এ লড়াইয়ে জিতেছে আবাহনী।

অন্য দিকে চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি মোহাম্মদ আশরাফুল। ডিপিএলে প্রথম ৬ রাউন্ডে তার ফিফটি ছিল ১টি। তিনবার ফিরেছেন দশের আগে, তার মধ্যে দুটি আবার শূন্য। অবশেষে মঙ্গলবার স্বরূপে দেখা গিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়নের অধিনায়ককে। রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে দাপুটে এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন আশরাফুল। সাভারের বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ১৪১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস বেরিয়ে এসেছে আশরাফুলের ব্যাট থেকে। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা ইনিংস।

[caption id="attachment_343529" align="aligncenter" width="1280"] ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মঙ্গলবার মোহামেডানের বিপক্ষে রানের জন্য প্রান্ত বদল করছেন আবাহনী লিমিটেডের আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।[/caption]

মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৯ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান করে সাদা-কালোরা। রান তাড়া করতে নেমে ২২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতে আবাহনী। জয় নিশ্চিত করে অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৫২ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। দলীয় ১৭১ রানে জাকের আলী অনিক আউট হলে মোসাদ্দেক-আফিফ জুটি গড়েন। মাত্র ৩৬ বলে ফিফটি করেন মোসাদ্দেক। আর আফিফ ৩৮ বলে খেলেন ম্যাচ জেতানো এই ইনিংস।

রান তাড়া করতে নেমে ধীরগতিতেই এগোচ্ছিল আবাহনীর ইনিংস। টানা তিন চারে ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার শুরু করলেও অন্য ওপেনার নাঈম শেখ ছিলেন ব্যর্থ। তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। মুনিম থামেন ৩১ রানে। এরপর খেলার হাল ধরেন হানুমা বিহারি-জাকের। দুজনেই বুঝেশুনে খেলে ইনিংস গড়ায় মনোযোগ দেন। ৬৪ বলে ফিফটির দেখা পান হানুমা, আর জাকের ৮০ বলে। যদিও ফিফটির পর বেশি দূর যেতে পারেননি দুজন। জাকের ৬০ ও হানুমা ৫৯ রানে আউট হন। এরপর মোসাদ্দেক-আফিফ ম্যাচ জিতিয়ে মাঠে ছাড়েন।

মোহামেডানের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ হাফিজ, শুভাগত হোম ও মুশফিক হাসান।

এর আগে পাকিস্তানি তারকা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ হাফ সেঞ্চুরি করলেও তার ধীরগতির ব্যাটিংয়ে আবাহনীর বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আড়াইশ রান পার করলেও আকাশি নীল জার্সিধারীদের সামনে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়তে পারেনি সাদাকালো জার্সিধারী ক্লাবটি।

দলীয় ৫৯ রানে ফেরেন দুই ওপেনার রনি তালুকদার (৩৪) ও আব্দুল মজিদ (১৪)। হাল ধরেন হাফিজ ও রুবেল মিয়া। দুজনে শতাধিক রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। দুজনের ব্যাট থেকেই আসে ফিফটি। রুবেলের তুলনায় হাফিজের ব্যাটিং ছিল মন্থর। ৮৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছয়ে দেখা পান ফিফটির। অন্যদিকে রুবেল ফিফটি করেন ৬৩ বলে। হাফিজ শেষ দিকেও ধীর শুরুর ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারেননি। ১০১ বলে ৭০ রান করে ফেরেন সাজঘরে। রুবেল থামেন ৫১ রানে।

দুজন ফিরলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে মোহামেডান। ক্রিজে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-শুভাগত হোমের মতো ক্রিকেটাররা থাকলেও বড় স্কোর এনে দিতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহ ৩৭ বলে ৪২ রান করেন। শুভাগতর ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। মোহামেডান শেষ ৫ উইকেট হারায় ২৩ রানের ব্যবধানে।

আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তানজীম হাসান সাকিব। ৯ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে এই উইকেটগুলো নেন তিনি। এ ছাড়া ২টি উইকেট নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথে জয়ী হলেও লিগ টেবিলে আবাহনীর অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে আকাশি হলুদ জার্সিধারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০ পয়েন্ট।

ঘরোয়া ক্রিকেটে মঙ্গলবার আবাহনীর বিপক্ষে হারের পর অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে মোহামেডানের। এখন জয়ের চেয়ে পরাজয়ের পাল্লা ভারী হয়েছে শুভগত-রিয়াদদের। ৭ ম্যাচে ৩ জয়ের বিপরীতে ৪ পরাজয়ে মোহামেডানের সুপার লিগ খেলার সম্ভাবনা আরও কমে গিয়েছে। এখন শেষ তিন ম্যাচের সবকটা না জিতলে সেরা ছয়ে জায়গা পাওয়া কঠিনই হবে সাদা কালোদের।

অন্যদিকে ইউল্যাব মাঠে শীর্ষে থাকা প্রাইম ব্যাংককে গতকাল ১ উইকেট হারিয়ে লিগ টেবিলে অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে শেখ জামাল। ৭ ম্যাচ শেষে ৬ জয় নিয়ে শেখ জামাল এক ম্যাচ কম খেলেও ধরে ফেলছে প্রাইম ব্যাংককে।

সর্বাধিক ৮ ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো হারের স্বাদ নেয়া এনামুল হক বিজয় আর নাসিরদের পয়েন্ট ১২তেই বহাল রয়েছে। শেখ জামালেরও পয়েন্ট ১২। মঙ্গলবার বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মুখোমুখি হয় ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে আশরাফুলের অপরাজিত সেঞ্চুরি আর চতুরঙ্গর ব্যাটিং ঝড়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ব্রাদার্স।

১০টি চার ও ১টি ছয়ে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন আশরাফুল। শেষ পর্যন্ত ১৩৯ বলে ১৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। অবশ্য ফিফটি পেয়েছিলেন একটু ধীরগতিতে। ৭৭ বলে ৫টি চারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এর আগে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আশরাফুলের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিল ১২৭ রানের। এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাদার্সের অধিনায়ক।

অথচ শুরুটা ভালো ছিল না ব্রাদার্সের। শূন্য রানে ফেরেন ওপেনার ইমতিয়াজ। মায়শুকুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে এবার জুটি গড়েন আশরাফুল। দুজনের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে ব্রাদার্স। মায়শুকুরের ব্যাট থেকে ৬৮ রান। ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। মায়শুকুর ফিরলেও ব্রাদার্সের রানের চাকা থামেনি। মাঝে মিনহাজুল ৩৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর শুরু হয় চতুরঙ্গ ঝড়।

৪টি চার ও ৩টি ছয়ে মাত্র ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান। অর্ধশতকের পর অবশ্য বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। ৫১ রান করে ফেরেন সাজঘরে। রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে একটি করে উইকেট নেন ফরহাদ রেজা, নাসুম আহমেদ, ফজলে মাহমুদ রাব্বি ও আরিফুল হক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App