×

জাতীয়

ইতিহাস জানতে সবার আগ্রহ বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৫ এএম

ইতিহাস জানতে সবার আগ্রহ বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে

উদ্বোধনের পর থেকেই সব বয়সি মানুষের আগ্রহের জায়গা তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য জানতে ও দেখতে এখানে আসছেন।

উদ্বোধনের পর থেকেই সব বয়সি মানুষের আগ্রহের জায়গা তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য জানতে ও দেখতে এখানে আসছেন। আগ্রহ আছে বিদেশি অতিথিদেরও। সরকারি ছুটির দিনে হচ্ছে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়। ১১ হাজার ৫০ বর্গফুটের নবনির্মিত পাকা ভবন সময় নিয়ে ঘুরে দেখলে জানা যাবে পুরো বাংলাদেশের চিত্র। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন এই জাদুঘরে আছে ৬টি ভাগ। এর মধ্যে বিজয় অঙ্গন, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী গ্যালারি, তোশাখানা জাদুঘর, জাতিসংঘ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিরক্ষা কর্নার। প্রতিটি গ্যালারিতে আছে একটি করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্নার। জাদুঘরের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে সেনাবাহিনী। অত্যাধুনিক জাদুঘর ভবনের চারপাশে বাঁশবাগান, সুপারিগাছের সারি, সবুজ মাঠ আর জলাধার, নীল পানিতে ঝর্নার নাচন। মাঠের ভেতরে থাকা কার্তুজের অবশিষ্টাংশ দিয়ে তৈরি যুদ্ধরত সৈনিকের স্থাপনা শিল্প জাদুঘরের মর্মার্থ তুলে ধরেছে।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম মোয়াজ্জেম হোসেন ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে মিরপুরে আর্মি জাদুঘর ১৯৯৯ সালে বিজয় সরণিতে স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর পরিচিতি পায়। এরপর গত ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধন করেন। গত ১১ জানুয়ারি এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে ১৯৪৭-৭১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরের সামরিক ঐতিহ্যের গ্যালারি রয়েছে। জাদুঘরটি যেভাবে আছে সেভাবে রেখে আরো সুন্দর, আকর্ষণীয়, নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে আছে একটি সিনেপ্লেক্স, মুক্তমঞ্চ, বিশাল পাঠাগার, মিলনায়তন, ক্যাফেটেরিয়া। একটি স্যুভেনির শপ বিক্রি শুরু করেছে। এরই মধ্যে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ সব পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্র হয়েছে এই জাদুঘর। এখান থেকে তারা ইতিহাসের ক্রমধারা জানতে পারছে। এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশকে জানানোর জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মূলশক্তি ছিল বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও সব শ্রেণিপেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। বাঙালি জাতির লালিত স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম বলেন, ১৯৭১ সালের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস, স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী ক্রমবিকাশ এই জাদুঘরে তুলে ধরা আছে। বিভিন্ন আর্টিফেক্ট, ডিসপ্লে ও ইলেকট্রনিক্স গেজেটের মাধ্যমে এসব তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, জাদুঘর পরিচালনার জন্য এখনো পর্যাপ্ত জনবল নেই। দিনে দিনে পরিধি বাড়লে প্রয়োজন হবে বাড়তি জনবল। এই জাদুঘর ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। এই জাদুঘরের স্থপতি আলী ইমাম এবং বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার।

এমনিতে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ও বিকাল দুই দফায় জাদুঘর খুলে, বুধবার বন্ধ থাকে। শুক্রবার বাদে অন্য দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত খোলা। নামাজ ও খাবারের বিরতি দিয়ে আবার শুরু বেলা ৩টা থেকে, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শুক্রবার শুধু বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। তবে রমজান মাসে বুধ ও শুক্রবার জাদুঘর বন্ধ থাকবে। অন্য দিনগুলোতে খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। ১১ জানুয়ারির পর অনেক দর্শনার্থীর মধ্যে ভারতের ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধি দল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েত সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদল ছাড়াও বিজিবি স্কুল, হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ, গাজীপুরের আসিস বিন সাবিত (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও আছেন পরিদর্শকের তালিকায়।

জাদুঘরে ঢুকতেই প্রথমে আছে বিজয় অঙ্গন। এই গ্যালারির ভেতরে ‘ইতিহাস দর্পণ : শশাঙ্ক থেকে শেখ মুজিব’ এই অভিনব উদ্যোগ। এখানে উঠে এসেছে বাংলার ভৌগোলিক ইতিহাস, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে নানা জনযুদ্ধের স্মারক, পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহি বিদ্রোহ। শুধু যুদ্ধের ইতিহাস নয়, আছে পলাশীর যুদ্ধসহ ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত কয়েকটি কামান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখতে দেখতে দর্শকরা এসে পড়বেন বিশাল গোলাকার কাচে ঘেরা এক প্রান্তে। বিজয়ের মুক্তির আনন্দ যেন ধরা পড়ে ভবনের এই উন্মুক্ত কাঠামোর মধ্যে। কাচ ভেদ করে আসা প্রাকৃতিক আলোয় ভরা এ প্রান্তে চৌখুপি অঙ্কনে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে নিরস্ত্র বাঙালির প্রতিবাদ থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধের লড়াই। প্রাচীন আমলের দুর্গের আদলেই গড়ে উঠেছে এখনকার সেনানিবাস। বাংলার প্রাচীন সেই দুর্গগুলোর ইতিহাস আছে, আছে রেপ্লিকা। আছে অপারেশন সার্চলাইট থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় অপারেশনের প্রামাণ্য দলিল। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে সেনাবাহিনীর কর্নারে গেলে অন্য রকম এক আবহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর বাংকারে থেকে লড়াইয়ের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আছে মুজিব ব্যাটারি কামান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যবহৃত গাড়ি। একটি অংশে অজস্র অস্ত্রের সম্ভার। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র শুধু নয়, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে থেকে যুদ্ধ করে জয় করা অস্ত্রও আছে। এখানকার যুদ্ধসরঞ্জাম ঘূর্ণমান টেবিলে প্রদর্শিত হচ্ছে। তাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে দর্শনার্থীরা সরঞ্জামের পুরোটা দেখতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে আছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ভাগ করে বিশাল এক ইন্টারঅ্যাকটিভ মানচিত্র আছে। কোনো একটি সেক্টর স্পর্শ করলেই সেই এলাকা, সেক্টর প্রধানের নাম-পরিচয়, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনসহ আদ্যোপান্ত উঠে আসবে। সঙ্গে থাকছে ভিডিও। আরেকটি ট্যাবে রয়েছে ২৪ হাজার সেনা মুক্তিযোদ্ধার তথ্য। বিমানবাহিনীর গ্যালারিতে আছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত নানা স্মারক। উড়োজাহাজের নানা যন্ত্রাংশও লক্ষ্য করার মতো। নৌবাহিনীর গ্যালারিতে গেলে দর্শনার্থীরা যেন হারিয়ে যাবেন সমুদ্রতলের রাজ্যে। সেখানে রাখা সাবমেরিনে ঢুকে নৌযুদ্ধের আবহ বোঝা যায়। আছে সমুদ্রতলের পরিবেশের উপস্থাপনা। সেখানে বিচরণ করে মাছ ও নানা জলজ প্রাণীর ছায়া প্রদর্শনী। মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, দেশের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে অবদান। একটি গ্যালারিতে সে সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত ও সম্ভার রয়েছে। এরই মধ্যে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App