×

রাজধানী

সয়াবিনের বাজারে কৃত্রিম সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩৬ এএম

সয়াবিনের বাজারে কৃত্রিম সংকট

সয়াবিন তেল। ফাইল ছবি

  • বহু দোকানে মিলছে না ৫ লিটার বোতল
  • সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয় না কোথাও

শুক্রবার চাঁদ দেখা যাওয়ায় গতকাল শনিবার থেকে পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে সৌদি আরবে। সে হিসাবে আজ রবিবার থেকে দেশে সিয়াম সাধনার মাস শুরু হওয়াটা প্রায় নির্ধারিতই ছিল। তাই গতকাল অনেকেই ছুটে গেছেন বাজারে। কিন্তু বেশি দামে ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য কিনতে পারলেও চাহিদা মতো সয়াবিন তেল পাননি অনেকে। কেউ ৫ লিটারের বোতল কিনতে গিয়ে পেয়েছেন এক/দুই লিটারের বোতল। বড় বাজারগুলোতে জরিমানার ভয়ে দোকানের তাকে তেল সাজিয়ে রাখলেও এলাকার মুদি দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর দোকানিরা বলছেন, স্টক যা ছিল শেষ হয়ে গেছে। তাদের কাছে আর তেলের মজুত নেই। দক্ষিণ খিলগাঁও এলাকার মুদি দোকানি রফিক মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। যা দিচ্ছে তাও বেশি মূল্যে। তাই তাদের পক্ষে খুচরা ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দেশে নতুন কিছু নয়। তবে এবারের ভোজ্যতেলের বাজার যেন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। প্রথমে সংকট শুরু হয়েছিল তেলের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে। এখন বেশি দামেও পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এ যেন বোতলজাত তরল সোনা! হাতে পেলেই ধন্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

গতকাল রাজধানীর কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা তবারক হোসেন ৫ লিটারের সয়াবিন তেল কিনতে এজিবি কলোনি বাজারে গিয়ে ২ লিটারের তেল কিনে ফিরে আসেন। এদিকে রোজার বাজার করতে খিলগাঁও বাজারে এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমদাদ হোসেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনতে না পেরে কিছুটা বিরক্ত হয়েই তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ইফতারের ভাজাভাজি করতে গেলে বাড়তি তেল দরকার। তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের একটি সয়াবিন তেলের বোতল নিলাম ৭৭৫ টাকায়। যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে। বাজারে গেলেও তাই মনে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- দাম বেশি। সব পণ্যের দামই আগের তুলনায় বেড়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আগে দেখতাম রমজান এলে দাম বাড়ত। এখন ব্যবসায়ীদের কৌশল পাল্টেছে। দুই বছর ধরে দেখছি রমজান আসার এক-দুই মাস আগেই প্রায় থেকে ৪ গুণ দাম বাড়ায়। পরে একটু কমিয়ে বলে দাম কমেছে। কিন্তু আগের দামে আর ফিরে আসে না।

অন্যদিকে সাভারের দক্ষিণ দরিয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা রফিক মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি গেণ্ডা বাজার ও নামা বাজারে গিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি। ফলে খোলা তেল নিয়ে ফিরতে হয়েছে। দোকানিরা এ বিষয়ে জানান, সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে। এ কারণে ডিলাররা তেল সাপ্লাই দিচ্ছেন না। এজন্য বাজারে তেলের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। ব্র্যান্ড ভেদে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। আর পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ থেকে ৭৮০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা; খোলা পামওয়েল ১৫৬ থেকে ১৫৮ টাকা। অথচ লাগামহীন ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত মাসে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রিতে থাকা সব ধরণের ভ্যাট তুলে নিয়েছে সরকার। এতদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য ছিল। পরে গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দামের ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল ৭৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

এদিকে সপ্তাহ দু-এক আগে ভোজ্যতেলের দাম সরকার নির্ধারিত দরের নিচে চলে আসলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে পাইকারি বাজারে। কারখানা থেকে নতুন সরবরাহ আদেশ না আসায় বাজার অস্থির বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৪৪ টাকা ৬০ পয়সায়। এ দর সরকার নির্ধারিত খুচরা দরের চেয়েও সাড়ে আট টাকা বেশি।

সরকার ভ্যাট কমানোর পরও এবারের রোজায় গতবারের চেয়ে বেশি দামেই ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এর প্রধান কারণ, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম গতবারের তুলনায় বাড়তি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। এবার ভ্যাট কমানোর পরও এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৫৮-১৬৫ টাকায়। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় দাম এখনো প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে দাম কমার সুফল নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাজার তদারকি করা উচিত। তদারকি থাকলে কেউ বাড়তি সুবিধা নিতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা আছে। ভবিষ্যতে নিত্যপণ্যের আমদানি যেন স্বাভাবিক থাকে, সেদিকে নজর রাখা দরকার। প্রয়োজনে সরবরাহ বাড়াতে সরকারকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App