×

সারাদেশ

টাঙ্গুয়ার হাওরে ডুবেছে ৮১ গ্রামের ফসল, আরও বাঁধ ভাঙার শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩১ পিএম

টাঙ্গুয়ার হাওরে ডুবেছে ৮১ গ্রামের ফসল, আরও বাঁধ ভাঙার শঙ্কা

নদীতে বাড়ছে পানি। ছবি: ভোরের কাগজ

টাঙ্গুয়ার হাওরে ডুবেছে ৮১ গ্রামের ফসল, আরও বাঁধ ভাঙার শঙ্কা

পাঁচ থেকে সাত কেয়ার জমি করেছিলাম। শনিবার সবগুলো জমির কাচা ধান পানির নিচে চলে গেছে। শুধু আমার নয়, এরকম ৮১টি গ্রামের মানুষের ফসল ডুবেছে। এছাড়াও অন্যান্য বেড়ি বাঁধের কাজও ঠিকমতো হয়নি। অনেক বাঁধে এখনও দুর্বা ঘাস লাগানো হচ্ছে। এদিকে নদীতে পানির প্রচুর চাপ। আমাদের প্রার্থনা অন্যান্য বাঁধগুলো যেনো না ভাঙে। ‘দশ বাপ ভাইয়ে খাইলে আমরার শান্তি’। আমাদের মতো ফসল হারা যেনো আর কেউ না হয়। টাঙ্গুয়ার পাড়ের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের হুকুমপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল নিরিখ কথাগুলো বলছিলেন।

শনিবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টায় তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের নজরখালীর বেড়ি বাঁধ ভেঙে যায়। ভারতের চেরাপূঞ্জিতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বছরের প্রথম ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙার ঘটনা এটি।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি, রূপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রায় ৩ হাজার একর জমির ফসল ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে প্রশাসন বলেছে, শনিবার ২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। রবিবার হয়তো আরেকটো বাড়বে। এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি ও ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে অন্যান্য বাঁধও ঝুঁকিতে রয়েছে। রবিবার ভোররাত থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে সুনামগঞ্জে। এছাড়াও বিকালে জেলার কোথাও কোথাও বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। তাই সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও সংশ্লিষ্টদের সর্তক অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসন।

এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের বরাম হাওরের তোফানখালী বাঁধে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এই বাঁধটি। পিআইসি নম্বর ৮৫ ও ৮৬ আওতায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারটি হাওর অংশে ফাটল ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এবিষয়ে দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন বলেছেন, উপজেলার ৮ টি ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। তুফানখালী বাঁধে ফাটল ধরেছে। আমি উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

টাঙ্গুয়ার পাড়ের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের কুইত্থারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রাশেদ মিয়া বললেন, অনেক কষ্ট করে এই হাওরে ১০ কেয়ার জমি চাষ করেছি। গতকাল নজরখালীর বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে সমস্ত ক্ষেত। এখন সারা বছর বউ বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলবো তা ভেবে পাচ্ছি না। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমাদের চলার কোনো গতি নেই।

তিনি আরও বলেন, বাঁধ নির্মাণ করার অনুদান এনেছে বড় করে, সেরকম কাজ করেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। ফলে পানির প্রথম ধাক্কাতেই বাঁধ ভেঙে কাচা ধান ডুবে গেছে। গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. মোসা মিয়া বললেন, আমারও ৮ কেয়ার জমি তলিয়ে গেছে। বাঁধ ঠিকঠাক মতো না করায় এই দুর্ভোগ আমাদের। এছাড়াও নদীর নাব্যতা কম। পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার এটিও একটি বড় কারণ। আমাদের বাঁধ তো গেছেই, অন্যান্য হাওরের বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। সরকার টাকা দিয়েছে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য, কিন্তু যারা স্থানীয়ভাবে কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা অবহেলা করেছেন, দুর্নীতি করেছেন।

জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা মো. নুর মিয়া বললেন, গেল ২ দিন ধরে বাঁধের দিকে চেয়ে আছি। হাওরে পানি ডুকছে, আর আমাদের চিন্তা বাড়ছে। এই হাওরে ৬ কেয়ার জমি এখন পানির নিচে। কেটে যে আনবো সেরকমও হয়নি। কাচা রয়ে গেছে। একটু পাকলে হয়তো পানির মাঝেই কেটে আনতে পারতাম।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে ১২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিলো। তিন- চার বছর কোনো বন্যা না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা এই জমিগুলোতে ধান চাষ করেন। নজরখালী বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নয়। স্থানীয় কৃষকরা প্রতিবছর নিজেদের অর্থায়নে এই বাঁধ নির্মাণ করেন। এবার তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানির প্রথম ধাক্কাটা মোকাবেলা করতে পারলে এই হাওরের ধান পনেরো ষোলো দিনের মধ্যে পেকে যেতো। সেই লক্ষমাত্রা সামনে রেখেই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গেল কয়েকদিনে ভারতের চেরাপূঞ্জিতে ৫৪৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হবার কারণে যাদুকাটা নদী ও পাহাড়ি ছড়া দিয়ে প্রবল ভেগে পানি চলে আসে। এতে আমাদের নদীগুলোতে প্রায় ৪. ৪ মিটার পানি বেড়ে যায়। একারণেই এই পানির চাপ এই বাঁধ মোকাবেলা করতে পারেনি। তবে অন্যান্য বাঁধের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা হলেও কোনো ঝুঁকি নেই। বৃষ্টিপাত না হলে পানি নদীর পানি কমে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App