×

জাতীয়

হাসান আরিফের মরদেহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৭:১৮ পিএম

হাসান আরিফের মরদেহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফের প্রতি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যজনসহ সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ২ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ দেহ দান সম্পন্ন হয়।

এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফের পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তার বোন রাবেয়া রওশন তুলি।

[caption id="attachment_343045" align="aligncenter" width="1280"] শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মরদেহ দান সম্পন্ন হয়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন একটি মহৎ কাজ করার জন্য আল্লাহ যাতে তাকে (হাসান আরিফ) জান্নাত দান করেন। হাসান আরিফ জীবিত থাকার অবস্থায় দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মৃত্যুর পরও তার দেহের মাধ্যমে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করব। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ যে সেবা দেবে তা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তার এ অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

রাবেয়া রওশন তুলি বলেন, আমি সকলের কাছে পরিবারের পক্ষে কৃতজ্ঞ। আমি বোন হিসেবে, আইনগতভাবে অনেক বছর ধরে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ওর দেহ সঠিকভাবে, সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে সবাই সহয়োগীতা করেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ।

শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় হাসান আরিফের মরদেহ। সেখানে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, উদীচী, সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার, পদাতিক নাট্যসংসদ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম বাংলাদেশ, আবৃত্তি অঙ্গন, আবৃত্তি সংগঠন ত্রিলোক, শ্রুতিঘরসহ নানা সংগঠন।

এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ সর্বস্তরের মানুষেরা।

ডা. দীপু মনি বলেন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন একে অপরের হাত ধরে চলে। সেখানে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নিঃস্বার্থভাবে এ দেশকে ভালোবেসে গেছেন।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, হাসান আরিফ একজন সৃষ্টিশীল সংগঠক ছিলেন। তার কণ্ঠ আবৃত্তিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। তিনি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেছেন। সারাদেশের সংস্কৃতি চর্চায়, বিশেষ করে কবিতা চর্চা, কবিতা আবৃত্তিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান ছিল। তিনি অকালে চলে গেছেন। নিঃসন্দেহে তার এ মৃত্যু আমাদের সংস্কৃতি আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা তার চলে যাওয়ায় শোকাহত। তার চলে যাওয়ায় সংস্কৃতি আন্দোলনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। বর্তমানে যারা সংস্কৃতি চর্চা করেন তার রেখে যাওয়া কাজে তাদের হাল ধরতে হবে।

মফিদুল হক বলেন, হাসান আরিফের মধ্যে একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক একটা সংমিশ্রণ ছিল। সেই বাস্তবতায় নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল। পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করেছে। দেশের আবৃত্তি শিল্পে স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছে।

অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ গঠনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তার কণ্ঠ দিয়ে সারাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছেন।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আরিফ ছাড়া আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন আগের মতো থাকবে না। তাকে ছাড়া পথ চলা কঠিন হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা থেমে গেছে। কিন্তু আরিফের মতো তরুণ সংস্কৃতিকর্মীরা থেমে থাকেনি। তারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আরিফ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিল। সে স্বপ্নকে আমাদের বাস্তবে রূপ দিতে হবে।

গোলাম কুদ্দুস বলেন, তিনি দেশের বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী ছিলেন। ব্যক্তিগত ভোগবিলাস আনন্দের কথা ভুলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাকে এত অল্প সময়ের মধ্যে বিদায় দিতে হবে আমরা কখনও ভাবিনি।

হাসান আরিফের ছোট বোন রাবেয়া রওশন তুলি বলেন, আমার ভাইটি আর বজ্রকণ্ঠে আবৃত্তি করবে না। আমার স্বপ্নবাজ ভাই স্বপ্ন দেখেছিল করোনা থেকে ভালো হয়ে বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা নিয়ে একশত আবৃত্তি শিল্পীর সমন্বয়ে একটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবে। দেশের আবৃত্তি শিল্পীদের কাছে আবেদন তার সেই ইচ্ছাটি যেন পূরণ হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App