×

খেলা

দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৮:০৪ পিএম

দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পর শনিবার ডারবানে আনন্দে মাতোয়ারা মাহমুদুল হাসান জয়

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ডারবানে টাইগারদের প্রথম ইনিংস গড়ে উঠেছে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের শতরানে ভর করেই। শনিবার (২ এপ্রিল) তৃতীয় দিনের শুরুতেই ইনিংসের ৬০তম ওভারে অফস্পিনার সাইমন হারমারের প্রথম বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৭০ বলে অর্ধশত পূর্ণ করেন জয়। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে এসে ২৬৯ বলে ১০ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসেই তুলে নিয়েছেন প্রথম শতক। তৃতীয় দিনে ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস। ফলে ৬৯ রানের লিড পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মাহমুদুল হাসান জয় ৩২৬ বলে ১৩৭ রান করে লিজাড উইলিয়ামসের বলে সাজ ঘরে ফিরেন জয়। এর সঙ্গে ডারবানে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।

ডারবানে টাইগার ব্যাটারদের মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮, লিটন দাস ৪১, ইয়াসির রাব্বি ২২ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ২৯ রান করেন। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক । তিনি শুন্য রানে সাজ ঘরে ফিরেন। নির্ভরতার প্রতীক খ্যাত মুশফিকুর রহিম আউট হন ৭ রানে। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে হারমার ১০৩ রানে ৪টি এবং লিজাড ইউলিয়ামস ৫৪ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন।

শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টাইগারদের শতক খরাও কাটিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। উইকেটের এক প্রান্ত অবিচল রেখে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শতক তুলে নেন তিনি। এর আগে সর্বোচ্চ ৭৭ রানের ইনিংসটি ছিল অধিনায়ক মুমিনুল হকের। এর আগে ঘরের বাইরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম অর্ধশত করেছিলেন এই তরুণ ওপেনার। ডারবানে টাইগারদের প্রথম ইনিংসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টাইগার ব্যাটারদের সঙ্গ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইনিংস।

এর আগে তরুণ পেসার খালেদ আহমেদের চার উইকেট নেয়ার সুবাদে প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ৩৬৭ রানে। এরপর ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৫ রানেই ওপেনার সাদমান ইসলাম সাজঘরে ফিরে গেলেও বাংলাদেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তিটা বাধে তৃতীয় সেশনে এসে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডানহাতি স্পিনার সাইমন হারমারের ঘূর্ণিতে ১৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার অধিনায়ক মুমিনুল শূন্য ও মুশফিকুর রহিম ৭ রানে ফিরে গেলেও তরুণ ব্যাটার জয় পরাস্ত হয়নি প্রোটিয়াদের স্পিনে। একের পর এক যাওয়ার আসার মিছিলে জয়ই ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক। দ্বিতীয় দিনের একদম শেষ ভাগে তাসকিনকে নিয়ে মোকাবিলা করেছেন হারমার-মহারাজকে। ১৪১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থেকেই দ্বিতীয় দিন শেষ করে আসেন মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় দিনে লিটনকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েছেন ৮২ রানের জুটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েই। এরপর তো শেষ ম্যাচে জয় পেয়ে টাইগাররা সিরিজ জয়ের ইতিহাসই গড়ে তোলে রীতিমতো। এবার ডারবানে প্রথম টেস্টে ডানহাতি ওপেনার জয়ের ওপর ভর করেই দারুণ কিছুর আশা করছে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজেই বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে এসেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো জয় পায় বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইতে সেই টেস্টেও দারুণ এক ইনিংস খেলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই তরুণ ওপেনার। তরুণ এই টাইগার ওপেনারের অভিষেকটা ছিল মলিন। দেশের মাটিতেই হোম অফ ক্রিকেট মিরপুরে অভিষেক হয় জয়ের। গত বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে সাদমান ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে নেমইে তার টেস্ট যাত্রা শুরু। তবে প্রথম ইনিংসেই তাকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। ৭ বলে ০ রান করে সাজিদ খানের বলে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান আলীর বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ৬ রান করেই ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু এরপর খেলা দুটি টেস্টেই নিজেকে চিনিয়েছেন ২১ বছর বয়সি মাহমুদুল হাসান জয়। বাংলাদেশ দল যখন ওপেনারের অভাবে ভুগছে তখনই জয় যেন দলকে টেনে তোলার ভারটা নিয়েছে নিজের হাতে। এই বছরের শুরুটা করেছেন দারুণভাবে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানুইতে তাদেরই বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন জয়। ৩২৮ রানের চাপ নিয়ে ইনিংস শুরু করতে গিয়ে টাইগাররা ৪৩ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর দারুণ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে গড়েছিলেন ১০৪ রানের জুটি। তিনি সাজঘরে ফিরছেন তখন স্কোরবোর্ডে টাইগারদের সংগ্রহ ৭০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮৪। জয় নামের পাশে ৩৪.২১ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৭ বাউন্ডারিতে ৭৮ রান। কিন্তু তার থেকেও বড় বিষয় নিউজিল্যান্ডের পেসারদের দারুণভাবে সামলে খেলে এসেছিলেন ২২৮ বল। এই ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকও তুলে নেন নিজের তৃতীয় ইনিংসেই। এবাদতের বোলিং তোপে ইতিহাস গড়া সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ৮ উইকেটে। তবে ব্যাটিংয়ে তরুণ জয়ের ৭৮ রানের ইনিংসও দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এরপর ডারবানে নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে চালকের আসনে বসে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন টাইগারদের।

লাল বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলের হয়ে নিজের শেষ দুই ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করলেও সাদা বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলের হয়ে এখনো অভিষেক হয়নি তরুণ জয়ের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শর্ট ফরম্যাটে অভিষেক না হলেও দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএলের সবশেষ আসরে ভালো খেলেছেন জয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১১ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ১১৫.১৯ স্ট্রাইকরেটে ২৬.১১ গড়ে করেছেন ২৩৫ রান। সর্বোচ্চ ৬৫ রানের ইনিংস খেলেছেন একটি ম্যাচে।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জয়ের নায়ক ছিল একজন বোলার। তাসকিন আহমেদ ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের এই ডানহাতি পেসার। যার ৮টি উইকেটই জয় পাওয়া ২টি ম্যাচেই। আর ডারবানে টাইগাররা প্রথম টেস্টে বড় কিছুর প্রত্যাশা করতেই পারে তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে ভর করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App