×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের বিষয়টি প্রমাণিত: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ০৫:২৫ পিএম

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের বিষয়টি প্রমাণিত: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

রাজধানীর বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: ভোরের কাগজ

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মদানের বিষয়টি আজ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী যৌথভাবে আয়োজিত 'বাংলাদেশের ৫০ বছরের পথচলা: গণহত্যা, জাতিরাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার বাংলাদেশ' শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। স্বাগত বক্তব্য দেন লে. কর্ণেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক মানস ঘোষ।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রমে ৩৪টি জেলায় ১৭ হাজার ২৮৬টি গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি গণহত্যায় যদি কম করে একশত মানুষও হত্যা করা হয়ে থাকে, তাহলে ৬৪টি জেলায় জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে সংখ্যাটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার সংখ্যাতাত্ত্বিক যে বিতর্ক রযেছে তার অবসান ঘটবে। যারা বলে ৩০ লাখ শহিদের আত্মদানের বিষয়টি সঠিক নয়, তাদেরকে নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

কে এম খালিদ আরো বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এ বঙ্গভূমি বাংলাদেশ কোনকালে কোন বঙ্গসন্তান তথা বাঙালি শাসন করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে মোগল, পর্তুগীজ, ব্রিটিশ, বর্গীদের দ্বারা বাংলা নামক এ ভূখণ্ড শাসিত-শোষিত হয়েছে। তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর বিপ্লবীরা এদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু তারা কেউ সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দিতে পারেননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বাঙালি যার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি বাংলাদেশ শাসন করেছেন।

মূল প্রবন্ধে বিনায়ক সেন বলেন, অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়তে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা জাতীয়তাবাদ এসব নিয়ে লড়াই তো ছিলই।কিন্তু তার সাথে যুক্ত হয়েছিল অতি বামপন্থার অন্তর্ঘাতী তৎপরতা ও অতি ডানপন্থি উগ্র মতবাদের সাথে বাড়তি লড়াইয়ের চাপ। গণতন্ত্রের পথে সমাজতন্ত্রের নির্মাণের ক্ষেত্রে যে ধরনের সামাজিক সুস্থিরতার ও সামাজিক সহিষ্ণুতার প্রয়োজন সে ধরনের সামাজিক পুঁজি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছিল, এসব শক্তির অশুভ তৎপরতার দ্বারা।

বিনায়ক সেন বলেন, আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্টের টার্ম চার বছর। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনককে আমরা রাষ্ট্র চালানোর জন্য তার আকাঙ্খার গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চার বছর সময়ও দেইনি, দিতে চাইনি আমরা।

দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। ভারতের সঞ্জয় কে ভরন্দাজের সভাপতিত্বে আয়োজিত অধিবেশনে ‘ট্রমার পুনর্পাঠ এবং সমাজ রূপান্তর: পরবর্তী প্রজন্মের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেঘনা গুহঠাকুরতা, ‘ভগ্ন জাতির স্মৃতির জমিন: স্মৃতি, স্মৃতিচারণ এবং শ্রীলংকার জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাধিকা হেত্তিয়ারাচ্চি, ‘যুদ্ধাবস্থার প্রতিবেদন’ শীর্ষক স্মৃতিচারণ করেন মানস ঘোষ,‘লিঙ্গ এবং বাংলাদেশের ১৯৭১-এর গণহত্যার স্মৃতি’, ‘রক্ত জাত: বাংলাদেশ এবংএক বিভক্ত সমাজের দ্বিধা দ্বন্দ্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কিংশুক চ্যাটার্জী।

উল্লেখ্য, দুইদিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মোট ৪টি একাডেমিক অধিবেশনে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ গবেষক অংশ নিয়ে বাংলাদেশ, গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App