×

জাতীয়

ওয়াকআউটের মধ্যে পৌর প্রশাসক নিয়োগে আইন পাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ০১:০০ পিএম

ওয়াকআউটের মধ্যে পৌর প্রশাসক নিয়োগে আইন পাস

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশিদ

বিরোধীদের ব্যাপক বিরোধিতা বিএনপির সাংসদ হারুনের ওয়াকআউটের মধ্যে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে আইন পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সংসদে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে কণ্ঠ ভোটে তা পাস হয়ে যায়।

পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারের প্রশাসক নিয়োগের বিধান ও কোনো পল্লী এলাকাকে শহর এলাকা ঘোষণায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) সংশোধন বিল-২০২২ সংসদে গৃহীত হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের এ বিধানের বিরোধিতা করে সংসদ কার্যক্রম থেকে ওয়াকআউট করেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ।

এর আগে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল, ২০২২ পাসকে কেন্দ্র করে সংসদে ব্যাপক বিরোধিতা করেছে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, বিলটিতে স্থানীয় সরকারের পৌরসভাগুলোতে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির স্থলে প্রশাসককে নিয়োগ করা অসাংবিধানিক। এর মাধ্যমে সরকার আবারও বাকশালী ধারা প্রণয়ন করতে চায়। বিলটির মাধ্যমে সরকার দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে স্থানীয় সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে চায়। এ বিলের এ ধারাটি বাদ দেয়া না হলে তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করবেন।

হারুন আরও বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের, তারা চাইলে নির্বাচন করা সম্ভব। তাহলে কেন সরকার এ বিলটি পাশ করে নিজেদের দলীয় লোককে প্রশাসক হিসেবে বসানোর পায়তারা করছে। তিনি বিলটি জনমত যাচাই করার আহ্বান জানান। তা না হলে তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করবেন।

জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন অকেজো করে দেয়া হচ্ছে। মূলত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোই গণতান্ত্রিক ধারায় চলা উচিৎ। আইনটির ৪২ (২) ধারা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া পীর ফজলুর রহমান, ফখরুল ইমামসহ অনেকেই বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে বিলটি পাস না করার দাবি জানান। বিলটি স্থিরীকৃত আকারে পাস হওয়ায় বিএনপির হারুনুর রশীদ সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।

বিল পাসের আগে জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেন স্পিকার। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না। প্রস্তাবিত আইনে, এ সংখ্যা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে।

বিলে পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনের ৪২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শহর এলাকাকে পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করিবে এবং পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রশাসক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রস্তাবিত আইনে এ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন পরিষদ গঠনের আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার। সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা সরকার উপযুক্ত মনে করে এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে।

বিলে পৌরসভা পরিষদের বাতিল সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাদিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে। নতুন পৌরসভা গঠন হলে বা কোনো ইউনিয়নের অংশবিশেষ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলে বিলুপ্ত ইউনিয়ন বা বিলুপ্ত অংশে কর্মরতদের পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তির বিধান বিলে রাখা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত জীবন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সেবার প্রত্যাশায় অধিক সংখ্যক মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। একইসঙ্গে শহর এলাকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন অনেক পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় যে, পৌরসভার নাগরিক সেবা প্রদান এবং নিজস্ব প্রশাসন পরিচালনার সক্ষমতা থাকে না। সুশাসন নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের শহরগুলোকে বাসযোগ্য করতে শহর গঠনে জনসংখ্যার ঘনত্বের মান পরিবর্তন প্রয়োজন।

আইনে পৌরসভাসমূহের মেয়াদ ৫ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত আগের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অনেক সময় পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। ফলে আইনের এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার ক্ষেত্রে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App