×

সম্পাদকীয়

শিশু ধর্ষণ বেড়েছে : প্রতিরোধে চাই রাষ্ট্রের কঠোর ভূমিকা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ০১:৩২ এএম

দেশে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা বেড়েছে। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটছে। গড়ে প্রতিদিন তিনজনেরও বেশি এবং মাসে প্রায় ১০০ শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘরকেই সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অনেক নারী ও কন্যাশিশুর জন্য ঘরও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। গত রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম। সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে বছরব্যাপী সারাদেশে কন্যাশিশু নির্যাতন নিয়ে জরিপ প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জরিপ করেন তারা। যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে সারাদেশে ১ হাজার ১১৭ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৭২৩ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ১৫৫ জন। এছাড়া ২০০ প্রতিবন্ধী কন্যাশিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬২৬ জন। এ হিসাবে এক বছরে দেশে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৪.৪৪ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট ১১৬ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ বিশেষ শিশুও রয়েছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৪। গত বছরের তুলনায় এ বছর যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়া ২০২১ সালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৫২ কন্যাশিশু। ধর্ষণ সামাজিকভাবে একটি চরম ঘৃণ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি পাপকাজ, অন্যদিকে দেশের আইনেও ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এত বাধা থাকার পরও কেন ধর্ষণের বীভৎসতা বেড়েই চলেছে- এটাই প্রশ্ন। বলা হয়ে থাকে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ভিকটিমরা দুর্বল বলে অপরাধীরা বিচার ও শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। যে কোনো বয়সের নারী শিশুকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্র যদি কঠোরতা না দেখায় তবে সমাজে ক্ষতের গভীরতা বাড়তে থাকবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ-সামাজিক নৈতিকতাও ধর্ষণের মতো বিকৃতি থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না। এসব নিয়েও ভাবা দরকার। বেগমগঞ্জের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী কয়েকজন অভিযুক্ত হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছে। এটি ইতিবাচক। নারী শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে সরকার ও সরকারি দল যদি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এবং কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করা যায়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ কমবে বলেই আমরা মনে করি। সব ধর্ষণ মামলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গণমাধ্যমসহ অন্যদের সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। তবে শুধু শাস্তি দিয়েই সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। এটি চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না এ ব্যাপারে সমাজ সোচ্চার হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App