×

মুক্তচিন্তা

বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ০১:০২ এএম

অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আমাদের রাজধানী প্রথম দিকেই রয়েছে। বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলোবালি। নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলো যুক্ত হয়। এরপরে রয়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি। এছাড়া নতুন একটি কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, তা হলো বর্জ্য পোড়ানো। ঢাকায় এখন নানা ধরনের বর্জ্য পোড়ানো হয় এবং এটা দিন দিন বাড়ছে। শিল্প কারখানার মধ্যে স্টিল রিরোলিং মিল বায়ুদূষণ করে, এরপরে আছে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নামে চলছে চরম দায়িত্বহীনতার প্রতিযোগিতা। ঢাকা শহরের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় এমন কোনো জায়গা পাওয়া যাবে না যেখানে ময়লার স্তূপ নেই। তা থেকে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও রাস্তার উন্নয়নের নামে কাজের দীর্ঘসূত্রতাও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। বছরের পর বছর ওয়াসার কাজ, গ্যালের লাইনের কাজ, ম্যানহোলের কাজ চলতেই থাকে। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তাছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধুলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণ এক নীরব ঘাতক। দূষিত বায়ুর কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ূদূষণের জন্য শ্বাসকষ্ট ছাড়াও পেটের সমস্যা, ফুসফুসজনিত সমস্যা, চামড়ার সমস্যা, হাঁপানি বা এলার্জিজনিত সমস্যা, চোখ ও নাকের সমস্যা, যে কোনো সংক্রমণ, গর্ভকালীন সমস্যা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ দূষণ খুব মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যা তাদের সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয়। দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতেও রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জলবায়ু তথা প্রকৃতির এই যে পরিবর্তন তা মানবসৃষ্ট। এই পরিবর্তনে প্রকৃতি কোনোভাবে দায়ী নয়, মানুষই দায়ী। বতর্মানে মানুষ নিজেদের স্বার্থের প্রকৃতির ওপর যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে অতীতে এতটা বিধ্বংসী রূপে দেখা যায়নি কখনো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে বায়ুদূষণের তালিকায় প্রথম হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি ঢাকাবাসীর। এ সময় বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২ যা ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি বছরও এক দিনের জন্য নির্মল বাতাস পায়নি রাজধানীবাসী। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। । ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে বেশি বেশি গাছ লাগানো দরকার। যেসব বড় গাছ আছে সেগুলো কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার। দূষণের জন্য দায়ী বিষয়গুলো সেগুলো এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ঢাকাবাসী চরম দুর্দশায় পড়ে যাবে। এজন্য চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞজনদের অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ আমলে নিতে হবে।

আবির হাসান সুজন : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App