×

জাতীয়

রাজধানী ঘিরে তৈরি হচ্ছে তিন ক্যাটাগরির ৬২ পার্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

রাজধানী ঘিরে তৈরি হচ্ছে তিন ক্যাটাগরির ৬২ পার্ক

ফাইল ছবি

রাজধানীকে ঘিরে তিন ক্যাটাগরির ৬২টি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। প্রস্তাবিত ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যান ড্যাপে আঞ্চলিক ৫, জলকেন্দ্রিক ৪৯ ও ইকোপার্ক আট- এই তিন ক্যাটাগরির পার্ক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে বলা হয়েছে বিভিন্ন রকমের আরো ৯টি ছোট ছোট পার্কের কথা। প্রস্তাবিত এসব পার্কের জন্য জায়গা ও জমির পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়েছে। ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই শুরু হবে পার্ক নির্মাণের কার্যক্রম। পার্কগুলোর কাজ পূর্ণ হলে এক অন্যরকম পরিবেশবান্ধব নগরী হবে ঢাকা।

৫টি আঞ্চলিক পার্ক : ড্যাপে সমস্ত পরিকল্পনা এলাকাকে ৬টি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এই ৬টি অঞ্চলের মধ্যে শুধু ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলেই আঞ্চলিক মাপের দুটি পার্ক রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আছে। বাকি ৫টি গাজীপুর, সাভার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ অঞ্চলে এই মাপের কোনো পার্ক নেই। তাই প্রস্তাবিত ড্যাপে প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে আঞ্চলিক পার্ক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এসব পার্ক এলাকা নির্বাচনে নদীর তীরবর্তী এলাকাকে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পার্কগুলো করতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা জমির প্রকৃত দামের তিন গুণ বেশি পরিশোধ করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পার্কটির জন্য আলিরটেক ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর তীরে চরবক্তাবলি ও গোপচর মৌজায় প্রায় ১৪৬ একর জায়গার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সাভার আঞ্চলিক পার্ক হবে ইয়ারপুর ইউনিয়নে দিয়াখালী ও তাজপুরে প্রায় ২০৭ একর জায়গায়। রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম-পূর্বগাঁও ও ছাতিয়ান মৌজায় ৬৪৫ একর জায়গা। কেরানীগঞ্জ আঞ্চলিক পার্কের জন্য রুহিতপুর ও কলাতিয়া ইউনিয়নের মুগারচর এবং চর চামারদাহা মৌজায় প্রায় ৫৪৫ একর এবং গাজীপুরের পার্কের জন্য সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সারুপাইতালি ও সুরাবাড়ি মৌজায় ২৮২ একর জায়গার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জলকেন্দ্রিক পার্ক ৪৯টি : ড্যাপের অন্তর্গত ৪৯টি জলাভূমিকে কেন্দ্র করে জলকেন্দ্রিক পার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে মৌজা ম্যাপের। এক্ষেত্রে জলাভূমি বলতে বোঝানো হয়েছে প্রাকৃতিক, স্থায়ী বা অস্থায়ী জলাধার যেখানে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পানি জমে থাকে। সেই পানির গভীরতা সাধারণত ৬ মিটারের কম। গোরানচটবাড়ি, গাবতলী ও উত্তরখান রিটেনশন পণ্ড এলাকা, শিয়ালবাড়ি ও কালশি মাটিকাটা রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক কেন্দ্র ও পার্ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। গোরান চটবাড়ি জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্কের জন্য মিরপুর বেরিবাঁধের পাশে ৫৮৭ একর জমি, শিয়ালবাড়ি রূপনগর পার্কের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৯ একর, কালশি-মাটিকাটা পার্কের জন্য মাটিকাটা রোডের পাশে প্রায় ১০০ একর, হেমায়েতপুর পার্কের জন্য জামু মৌজায় ৫৪ একর, গাবতলীর জন্য বাস টার্মিনালের পাশে ১৫৮ একর, বাউনিয়ার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানের পাশে ৩৯ একর, মীরেরগাঁও পার্ক-১ এর জন্য নাওয়ার ভার্তা ও টেকিবাড়িতে ১১০ একর, পার্ক-২ এর জন্য ৬১ একর, বেগমপুরের জন্য চয়ারটেক এলাকায় ৭০ একর, পাগলা পার্কের জন্য কুতুবপুর ইউনিয়ের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরসংলগ্ন পাগলা মৌজায় ১০ একর, পাগলা জলকেন্দ্রিক পার্কের জন্য ধোপাপিতা ও ফিলকুনিতে ৭৬ একর, কল্যাণপুর পার্কের জন্য ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ দশমিক ৩৫ একর, হাউস বিল্ডিং পার্কের জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ডের একই এলাকায় ২ দশমিক ৭৩ একর, মিরপুর বাংলা কলেজের জন্য কলেজের পাশেই ৫ দশমিক ৫১ একর, সোনাকান্দার জন্য রুহিতপুর ইউনিয়নে প্রায় ২৪ একর, হোগলাঘাটি পার্কের জন্য কলাতিয়ার আকচাইল এলাকায় ১৪ একর, কলাতিয়া-তারানগরের জন্য মুন্সি নোয়াদ্দা ও ছাগলকান্দিতে ৬১ একর, মুশুরিখোলা পার্কের জন্য সাভারের তেঁতুলঝড়া ইউনিয়নে ৩২ একর, তারানগর বিনোদনমূলক পার্কের জন্য টোটাইল ও পিটাচাকা মৌজায় ৩০ একর, আটিবাজার পার্কের জন্য তারানগরের ঘাটারচরে ১৭ একর, কোনাখোলার জন্য কালিন্দি ইউনিয়নে ৬ দশমিক ৪৪ একর, গোলাপ গ্রামের জন্য বিরুলিয়া ইউনিয়নের কুমারখণ্ডে ৫ দশমিক ৭৯ একর, কাউন্দিয়া পার্কের জন্য ইসাকাবাদে ৬ দশমিক ৬২ একর, জাহাঙ্গীরনগর হাউসিং সোসাইটি লেক পার্কের জন্য সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় ৪ দশমিক ৩০ একর, তৈয়বপুর পার্কের জন্য ইয়ারপুর ইউনিয়নের তৈয়বপুর মৌজায় ১৫ একর, সাভার ইপিজেড পার্কের জন্য ধামসোনা ইউনিয়নে ২০৪ একর, কলতাসূতির জন্য সুবান্দি মৌজায় ১৯ একর, বানসাবাড়ির জন্য ৮ একর, মির্জানগর পার্কের জন্য পাথালিয়া মৌজায় ১৯ একর, আলিরটেকের জন্য ৮৭ একর, হাজিপাড়ার জন্য রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ১৭ একর, সিপাহীবাগ পার্কের জন্য ৯ একর, মাদানি জলকেন্দ্রিক পার্কের জন্য ভাটারা মৌজায় প্রায় ১৬ একর, সাঁতারকুলের জন্য ১৪৮ একর, বারুয়া পার্কের জন্য প্রায় ৪১ একর, দক্ষিণখান পার্কের জন্য ২১ একর, উত্তরখানের জন্য প্রায় ৮ একর, মাতুয়াইল পার্কের জন্য মাতুয়াইল মৌজায় প্রায় ৪২ একর ও (আরেকটি) মাতুয়াইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাশে ৪৪ একর, নূরবাগ ডেউলাপারার জন্য নারায়ণগঞ্জের ডেউলাপারায় প্রায় ১৯ একর, মেরুল বাড্ডার জন্য মেরুল বাড্ডা এলাকায়, মান্ডা জলকেন্দ্রিক পার্কের জন্য দক্ষিণগাঁওয়ে প্রায় ২২ একর, ডগার পার্কের জন্য ২৫ একর, তারাব পৌর পার্কের জন্য খাদন মৌজায় ১৪ একর, গোলাকান্দাইল পার্কের জন্য ৩৩ একর, নাসিংগাল পার্কের জন্য ৩৩ একর, মাহানা পার্কের জন্য গোলকান্দাইল ইউনিয়নে ৩০ একর, মিরপুর মাজার পার্কের জন্য ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিশিল মৌজায় ৩ একর এবং পল্লবী ঝিল জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্কের জন্য মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন মারুল মৌজায় প্রায় ২৪ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইকোপার্ক ৮টি : গাজীপুরের ভাওয়াল বনাঞ্চলকে ইকোপার্কের আদলে গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। উত্তরখান ইকোপার্কের জন্য ম্লানঘাটা, তলনা, ভাতুরিয়া ও ছোট পলাশিয়া মৌজায় ৬৫৩ একর, জাঞ্জিরা-বক্তাবলি পার্কের জন্য চরসাংঘাট ও চর রক্তাবলি মৌজায় ২৮৪ একর, নাসিরাবাদ পার্কের জন্য গজারিয়া ও বালুধিত এলাকায় ১ হাজার ২ শত ২ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাইনবোর্ড ইকোপার্কের জন্য ডগার এলাকায় ৪২ একর, জালকুড়ি জলকেন্দ্রিক ইকোপার্কের জন্য জালকুরি ও কুতিবপুর এলাকায় ৮৬ একর, মেনিখালি ইকোপার্কের জন্য নারায়ণগঞ্জের বাইদের বাজার মেনিখালি এলাকার ৬১ একর এবং ভারগাও ইকোপার্ক, মইকলি তারাবর জন্য তারাব পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের সাদিপুর ও জামপুরের মাওকালি এলাকায় ৫২ একর জায়গা প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যান্য পার্ক ৯টি : তিন ক্যাটাগরি ছাড়াও আরো ৯টি পার্কের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রস্তাবিত ড্যাপে। বাউনিয়া খেলার মাঠের জন্য কালশি এলাকায় প্রায় ১৩ একর, সাভার বংশীপার্কের জন্য পৌরসভার দক্ষিণ দরিয়ারপুর এলাকায় ১৫ একর, সাভার পার্কের জন্য পৌরসভার বাড্ডায় ২৭ দশমিক ৪০ একর, নারায়ণগঞ্জ পার্কের জন্য নারায়ণগঞ্জ মৌজার দুটি পার্ক নির্মাণে প্রায় ১১ দশমিক ৮৯ ও ১২ দশমিক ২৭ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলামোড়া পার্কের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী মধ্যচর এলাকায় ৫ দশমিক ৯৫ একর, কাউন্দিয়া কেন্দ্রীয় পার্কের জন্য ইসাকাবাদে ৫ দশমিক ৮৭ একর, আমিরবাজার পার্কের জন্য বেগুনবাড়িতে ২ দশমিক ৪৭ একর এবং হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় জীববৈচিত্র্য পুনঃস্থাপনের জন্য গজমহল ও শিবপুরের প্রায় ৪৬ দশমিক ৭৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লা নুরী বলেন, প্রস্তাবিত এসব পার্ক বাস্তবায়ন সম্ভব। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার চিত্র পুরো বদলে যাবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ড্যাপে প্রস্তাবিত পার্কগুলোর অধিকাংশই জলকেন্দ্রিক। অধিকাংশই বাস্তবসম্মত। এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যে যে নগর এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন সেটা সিটি করপোরেশন হোক, পৌরসভা হোক কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ হোক সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগুলোর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করতে হবে। যেখানে অধিগ্রহণ করা দরকার, সেখানে এখনই অধিগ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, তবে জলাধারকেন্দ্রিক পার্কগুলোর অধিগ্রহণ করতে হবে না। সেগুলো সরকারি জায়গাতেই আছে। এই পার্কগুলো বাস্তবায়ন হলে বায়দূষণ কমাতে কাজ করবে। সুস্বাস্থ্য গঠনে কাজ করবে। তবে এই পার্ক বাস্তবায়নের ভার রাজউকের ওপর ছেড়ে না দিয়ে সংশ্লিষ্ট অন্য অথরিটি যেগুলো আছে, সেগুলোকেও এখানে সম্পৃক্ত করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App