×

সম্পাদকীয়

ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি স্মরণোৎসব : দুদেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২২, ০১:২১ এএম

এ বছরটি বাংলাদেশ ও ভারতের সম্প্রীতি ও সৌহার্দের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি আমরা। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গত ৫০ বছরে এক বহুমাত্রিক পথ পাড়ি দিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি ও জ্বালানি, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির মতো নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিস্তৃত। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের পথচারীরা। গত শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভোরের কাগজ আয়োজিত জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা ও ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি স্মরণোৎসবে তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইতিহাস এবং দুদেশের সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ, লেখক ও সাংবাদিক এম জে আকবর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংসদ আমির হোসেন আমু। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ‘মৈত্রী চুক্তি’র মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্কের গোড়াপত্তন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় বাণিজ্য চুক্তি ও ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকসহ সব সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার আস্থা ও প্রত্যাশার আবহ তৈরি হয়। চুক্তি হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি চুক্তি। আবার মাঝে ৯ বছরের ছন্দপতন। ২০০৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর দুদেশের প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ৬৮ বছরের পুরনো ছিটমহল বিনিময়, সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো একে একে সমাধান হতে শুরু করে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আনা হয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হলো করোনার ভ্যাকসিন। বাংলাদেশের জন্য সবার আগে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করে ভারত। যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন তরল অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় দুটি দেশেই। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি হলো আস্থা ও বিশ্বাস। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রক্তে লেখা এ সম্পর্ক। দুদেশের জনগণের মধ্যে এ সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। এ সম্পর্ক কেবল দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্কই নয়, এ সম্পর্ক দুটি দেশের জনগণেরও। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আসলে হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উদ্বেগজনক, বিশেষত ঘাটতির পরিমাণ যেখানে প্রতি বছর বাড়ছে। বাংলাদেশে ভারতের একটি বৃহৎ ও বিকাশমান বাজার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখান থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে লাভবান হতে পারেনি। আশার কথা, বাংলাদেশের চাহিদার ক্ষেত্রগুলোতে ভারত মনোযোগী হয়েছে। যেমন সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে বিএসএফকে নন-লেথাল অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন বাংলাদেশি পণ্যকে ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এ সম্পর্ক আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হোক- সেই প্রত্যাশাই রাখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App