×

সম্পাদকীয়

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মাইলফলকের সাক্ষী হতে পেরে আমরা গর্বিত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২, ০১:২৪ এএম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মাইলফলকের সাক্ষী হতে পেরে আমরা গর্বিত

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। দেশের ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যদিও ৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বড় পরিসর নয়। গড় আয়ুর নিরিখে হয়তো একটি প্রজন্ম মাত্র। তারপরও পরাধীনতার শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধশতাব্দীর মাইলফলকের সাক্ষী হতে পেরে আমরা গর্বিত। ৩০ লাখ বাঙালির বুকের রক্তে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও অগণিত মানুষের সীমাহীন দুঃখ-দুর্ভোগের বিনিময়ে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বিজয় মুকুট শিরে পরেছিল বাংলাদেশ। সুদীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নিপীড়ন আর সীমাহীন বঞ্চনার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার অমোঘ বাণী বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে ২৫ মার্চ গভীর রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ওই রাতেই গ্রেপ্তারের আগে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশবাসীকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করতে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বর্বরতার নিন্দা এবং বাংলাদেশের পক্ষে সাহায্য ও সহযোগিতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। যে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সেই ময়দানেই ৯৫ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যকে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে হয়। অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় হলো- স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় পরাজিত গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধগুলোর মূলে শুরু হয় কুঠারাঘাত। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের শিকড় উপড়ে ফেলার নীলনকশার বাস্তবায়ন চলে। কয়েক দশক ধরে স্বাধীনতার ইতিহাস নানাভাবে বিকৃত করা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশ। চেষ্টা চলছে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে নেয়ার। এ পথপরিক্রমায় অনেক গৌরবময় অর্জনের সাফল্যগাথা রচনা করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার প্রসার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়ন বিবেচনায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের ওপরে আমাদের অবস্থান। ১৩ বছর ধরে এদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬-৮ শতাংশ হারে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে অনেকটা স্থবির, বাংলাদেশ সেখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। হ্রাস পেয়েছে পুষ্টিহীনতা। লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন। আগামী বছরই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। এছাড়াও মেট্রোরেল, এলিভিয়েটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ ১০-১২টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে চলেছে দেশি-বিদেশি অর্থায়নে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আশার কথা, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় কার্যকর হয়েছে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদরদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। অনেকেরই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। ভেবে দেখতে হবে, কেন আজ দেশ ও জনগণ এতটা ধর্মান্ধতার পথে চোখ বুজে এগিয়ে চলেছে। তবে কি মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যকে সাধারণ মানুষের কাছে যেভাবে তুলে ধরা এবং জীবনে প্রতিফলিত করা উচিত ছিল, আমরা কি তবে সেই জাতীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি? যে দিন জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশের সব জনগণ প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের নাগরিক অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাস করতে পারবে, সে দিনই স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণ সফল বলে মনে করা যাবে। প্রতিক্রিয়াশীলতার সব বাধাকে অতিক্রম করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্যমৈত্রীর বাংলাদেশ গড়ব- এ হোক আমাদের সংকল্প।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App