×

সাহিত্য

২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে গণহত্যা জাদুঘরে সেমিনার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ০২:৪১ পিএম

২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে গণহত্যা জাদুঘরে সেমিনার

শুক্রবার (২৫ মার্চ) ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের গণহত্যার পাঁচ দশক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। ছবি: ভোরের কাগজ

‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের’ আয়োজনে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের গণহত্যার পাঁচ দশক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানে ‘বধ্যভূমির বিস্মৃতজন’ শীর্ষক কবিতা পাঠ করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি আসাদ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক উদ্যোগ ও একাডেমিক আলোচনা। মুক্তিযুদ্ধের পর পঁচাত্তর পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ব্যাহত করেছে দেশ ও বিদেশের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে গণহত্যা জাদুঘর ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে।

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর ২০১৭ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ‘২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের গণহত্যার সরকারি স্বীকৃতি প্রকৃতপক্ষে ৩০ লাখ শহীদের মহান আত্মদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি দেশে ও দেশের বাইরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিকৃতিকারীদের গণহত্যা অস্বীকারের অপচেষ্টা নিরুৎসাহিত করবে। একই সঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের সংকটও মোচন করবে এ স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মকে জানতে হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতিকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছে তা অন্য কোনো জাতিকে কখনও দিতে হয়নি।

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণহত্যার যে রাজনীতি বা দর্শন তার মূল উৎপাটন করা। ১৯৭১ সালের গণহত্যা হয়েছে ধর্মের নামে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে সন্ত্রাস ও গণহত্যার অভিশাপ থেকে কখনও মুক্তি পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু এ কারণেই ’৭২-এর সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, ভাষা, অঞ্চল- যে কারণেই হোক, বিশ্বকে গণহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে গণহত্যার স্বীকৃতি খুবই জরুরি। এ স্বীকৃতি গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি দেশে দেশে গণহত্যাকারীদের বিচারের পথ সুগম করবে। একই সঙ্গে অপরাধ থেকে দায়মুক্তির কলঙ্ক থেকে ইতিহাসকে মুক্ত করবে।

গণহত্যার বিচার চাইতে গিয়ে ৪০টি বছর মাটি কামড়ে পড়েছিলাম, মার খেয়েছি, অপমানিত হয়েছি এমন মন্তব্য করে সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যার বিচার পেয়েছি। তবে গণহত্যা জাদুঘরের জন্য সহযোগিতা চাইতে গিয়ে আমলাতন্ত্র অনেক বাধা দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কাছে ফাইল যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি স্বাক্ষর করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে মানুষ মনে রাখবে, কারণ ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা হয়েছিল এর বিচার করেছেন তিনি।

মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যা জাদুঘর দেশব্যাপী যে গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে বিষ্ময়কর ফল উঠে আসছে। পূর্বের রেফারেন্স বইয়ে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯০৫, আর আমাদের জরিপে ৩৪টি জেলায় সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭২৮৬। তাহলে ৬৪ জেলার সে সংখ্যা কতো দাঁড়াতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক এই বিতর্ক আসলে একটি খামোখা বিদ্যায়তনিক বিতর্ক ও জনতুষ্ঠিবাদী রাজনৈতিক বিতর্ক ছাড়া আর কোনো উপযোগিতা নেই।

কবি আসাদ মান্নান বলেন, একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে আগামি প্রজন্মকে জানাতে হলে সিনেমা ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App