×

জাতীয়

রাজনীতিবিদদের অভিমত: নীতি ও আদর্শই ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ভিত্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ১১:৩৬ পিএম

রাজনীতিবিদদের অভিমত: নীতি ও আদর্শই ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ভিত্তি

শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভোরের কাগজ আয়োজিত জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা ও ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি স্মরণোৎসবে ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ, লেখক ও সাংবাদিক এম জে আকবর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংসদ আমির হোসেন আমু এবং তাদের মাঝে সম্পাদক শ্যামল দত্ত। ছবি: ভোরের কাগজ

রাজনীতিবিদদের অভিমত: নীতি ও আদর্শই ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ভিত্তি
রাজনীতিবিদদের অভিমত: নীতি ও আদর্শই ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ভিত্তি

ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছর

নীতি আদর্শের ঐক্যে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিহাস। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের পথচারীরা। শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভোরের কাগজ আয়োজিত জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা ও ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি স্মরণোৎসবে তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইতিহাস এবং দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ, লেখক ও সাংবাদিক এম জে আকবর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংসদ আমির হোসেন আমু।

অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হলেও সোয়া ৬টা থেকেই অতিথিরা আসতে শুরু করেন। ঠিক সন্ধ্যায় আমির হোসেন আমু, এম জে আকবর, ভোরের কাগজের প্রকাশক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী, দি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু একটি টেবিলে বসে যখন আড্ডায় মেতে উঠেছেন তখনই সঞ্চালক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত মাইক্রোফোনে বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের ধরনটি ভিন্ন। অনুষ্ঠানে আমরা ২৫ মার্চের কালরাতকে স্মরণ করব। কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন গণহত্যার নজির নেই। এইদিনেই আমরা ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে আয়োজন করেছি জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির স্মরণোৎসব। সঙ্গে থাকছে ভোরের কাগজের ৩০ বছরের পথচলার কথা।

[caption id="attachment_341775" align="aligncenter" width="1280"] উৎসবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংসদ আমির হোসেন আমুকে উপহার তুলে দিচ্ছেন ভোরের কাগজের প্রকাশক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, জহুর হোসেন চৌধুরী এই দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক। ২০১০ সাল থেকে জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা শুরু হয়েছে এবং প্রতিবারই গণতন্ত্র, গণমাধ্যম, সুশাসন নিয়ে কোনো না কোনো অতিথির কাছ থেকে আমরা কথা শুনেছি। ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই সম্পর্ক কখনোই মসৃণ ছিল না। রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিহাস।

আলোচনার শুরুতেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের নির্মমতা ও বিপন্নকাল বলে মন্তব্য করেন এম জে আকবর। মূলত, ১৯৭৫-এর ঘটনার পর থেকে শেখ হাসিনা সংগ্রাম করে চলেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে দুটি বড় ঘটনা, একটি ১৯৭১ ও আরেকটি ১৯৭৫। এই বাংলাদেশ প্রথমে ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং পরে পাকিস্তানের উপনিবেশ। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মধ্য এই ধারা শেষ হয়। যেখানে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন সেটি ইতিহাসের অবর্ণনীয় ও শোচনীয় ঘটনা। স্বাধীনতা এসেছে মহাপুরুষ শেখ মুজিবের হাত ধরে। আর এখন বাংলাদেশের মহাশক্তি তারই কন্যা শেখ হাসিনা।

এরপরেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সুন্দর ও সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতাপূর্ণ অর্থনীতি বজায় আছে। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, অর্থনীতির পরিবেশ প্রায় কাছাকাছি। বেনাপোল সীমান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের একাধিক সীমান্তে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। ভারত-বাংলাদেশ একত্রে অনেক কিছু করা সম্ভব।

এরপরেই বিশ্ব রাজনীতির কথা তুলে ধরে টুইন টাওয়ার হামলার ইতিহাস, ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসনের কথা টেনে তিনি বলেন, আমেরিকা কাবুল দখল করেছে। রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের হাতে নিয়েছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও তেমনি একটি ঘটনা হতে চলেছে।

এম জে আকবরের কথার রেশ ধরে আমির হোসেন আমু বলেন, তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে যেভাবে ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের ৫০ বছর বর্ণনা করলেন আমি তা করব না। আমি আমাদের বাংলা, বাঙালি নিয়েই কথা বলব। প্রায় ২২ মিনিট ধরে তিনি ইতিহাসকে আবৃত্তির মতো বলতে থাকেন। ব্রিটিশদের বিভাজন নীতি, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্মকাহিনী, লাহোর প্রস্তাব, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম, অসন্তোষ পরে আওয়ামী লীগের জন্মকথা বর্ণনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান জন্মের পরেও ভারতের সঙ্গে এই বঙ্গের সংযোগ ছিল। তবে ১৯৬২ সালে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ভারতের সঙ্গে পথচলা গাঢ় হতে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। ভারতের সাহায্যে দেশ স্বাধীন হয়। শরর্ণাীদের তারা সাহায্য করেছে। আজও নানা ইস্যুতে তারা সাহায্য করছে। ভারতের সঙ্গে নৈতিক ও আদর্শগত সম্পর্কই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের মতো দেশের সহযোগিতা আছে বলে এখানে স্থিতিশীলতা এসেছে।

[caption id="attachment_341776" align="aligncenter" width="1280"] জহুর হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা দেন ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ, লেখক ও সাংবাদিক এম জে আকবর। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

সব মিলিয়ে রাজনীতির পথচারীরা গতকাল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট-কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় তার একটি মূল্যবান পর্যবেক্ষণ তুলে এনেছেন। তারা বলেছেন, ইতিহাসের নানা কথা এবং এই কথাগুলো ২৫ মার্চের কালরাতকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। এই ২৫ মার্চ বাঙালির জীবনে সুসময়, দুঃসময়- দুটোই এনেছিল। এর আগে এভাবে একসঙ্গে সুসময়, দুঃসময়- কোনোটাই আসেনি। সুসময়, দুঃসময়ের পাশাপাশি স্মরণ করা হয়েছে ভারতকেও।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই আলোচনা শুনেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংসদ অসীম কুমার উকিল, সাংসদ পংকজ দেবনাথ, সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জাসদের সভাপতি ও সাংসদ হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শিরিন আখতার, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, কথাসাহিত্যিক ড. এম এ মোমেন, বিচারপতি এ এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দেশ টিভির সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মোহাম্মদ, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক, সাউথইস্ট ব্যাংকের হেড অব ব্রাঞ্চ সরোজ কুমার দাস এসিএমএ, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ এ আরাফাত, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কম্পট্রোলার অ‍্যান্ড অডিটর জেনারেল মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত উল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব আনাম খান, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম খান, সাবেক তথ‍্য প্রতিমন্ত্রী অধ‍্যাপক আবু সাঈদ, মিডিয়াসিনের ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক কবি তারিক সুজাত, সাংসদ তানভীর শাকিল জয়, ওয়ালটন গ্রুপের উপ ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর, ইসলামী ব‍্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নজরুল ইসলাম, এসআইবিএলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান টিপু, বিসিসিএসআইআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক, মার্কেন্টাইল ব‍্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল করিম সোহাগ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App