×

পুরনো খবর

‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’, যোগনিদ্রায় দিবে ৫ ঘণ্টা ঘুমের কাজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২২, ১২:১৯ পিএম

‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’, যোগনিদ্রায় দিবে ৫ ঘণ্টা ঘুমের কাজ

ফাইল ছবি

‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’। যৌগিক নিদ্রা এমনই। ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি নিয়ে গিয়ে ২০ মিনিটের এই যৌগিক ক্রিয়া ৫ ঘণ্টা ঘুমের সমতুল সতেজতা দেয়। জন্ম দেয় এক নতুন আমি-র।

ঘুমের সময় আমরা স্বপ্ন দেখি, কিন্তু চোখে কিছু দেখতে পাই? গন্ধ পাই নাকে? কানে কিছু শুনতে পাই? ঘুমের সময় পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ব্রেনে কোনো ইনপুট দেয় না। ফলে ব্রেনে ইলেক্ট্রিক্যাল নিউরোলজিক্যাল সক্রিয়তা কমে। নিউরো ট্রান্সমিটারগুলির কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। যোগনিদ্রা আমাদের এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেখানে জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা ঘুমের সমস্ত সুফল পাব।

উপকারিতা

অবসাদ কাটাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে, স্মৃতিশক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগনিন্দ্রা অত্যন্ত উপযোগী। আসলে এই যৌগিকক্রিয়ার সময় আমাদের ব্রেনে থিটাওয়েব চলে। যা একমাত্র গভীর ঘুমের সময়ই সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, যোগনিদ্রা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া নয়। ঘুমের সতেজতা নিয়ে আসে বলে একে নিদ্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে শরীর-মনের সতেজতা ফেরাতে ঘুমের থেকেও বেশি কার্যকরী। ঘুম শুধু মাসকিউলার টেনশনকে কমায়। কিন্তু যোগনিদ্রা মাসকিউলার, ইমোশনাল, মেন্টাল তিন রকম টেনশনকেই কমায়। সেই অর্থে যোগনিদ্রা সচেতন অবস্থা ও গভীর নিদ্রার মধ্যে বিবাহ!

ইতিহাস

যোগনিদ্রার উদ্ভাবক স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী। সাধন জীবনের প্রথম দিকে তিনি হৃষিকেশে একটি আশ্রমে থাকতেন। সারারাত আশ্রম পাহারা দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ছিল তার উপর। শিক্ষার্থীরা ভোর ৪ টার সময় উঠে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করলে ঘুমাতে যেতেন স্বামীজি। একবার আশ্রমের এক অনুষ্ঠানে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছিল। স্বামীজির মন্ত্রগুলো খুব চেনা লাগছিল। যেন কোথায় শুনেছেন এগুলি। পরে গুরুর সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন। শুরু হয় ‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’ নিয়ে তার গবেষণা। আসলে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমালেও আমরা ইমোশনাল এবং মেন্টাল টেনশন থেকে মুক্তি পাই না। কিন্তু যোগনিদ্রা বিটা, আলফা, থিটা হয়ে ব্রেনকে ডেল্টা ওয়েবের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। আমেরিকায় যোগনিদ্রারত এক রোগীর উপর গবেষণা করে এই তথ্যই মিলেছে।

যোগনিদ্রা কীভাবে?

  • শবাসনে এই যৌগিকক্রিয়া করতে হবে। এমন একটি ঘর বেছে নিতে হবে, যেখানে অন‌্য কেউ ঢুকে আপনাকে জাগিয়ে দেবে না। প্রয়োজনে দরজার বাইরে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝুলিয়ে দিন।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে এই যৌগিকক্রিয়া করলে ভাল ফল মিলবে। তবে অনেকে মধ্যাহ্নভোজের পরেও যৌগিক নিদ্রা অভ‌্যাস করে থাকেন।
  • তবে, শবাসনের আগে মুখে সুন্দর হাসি এনে, মিনিটখানেক হাততালি দিয়ে নিজের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে হবে।
  • শবাসনে থাকা অবস্থায় দুটো পায়ের মাঝখানে, হাত ও শরীরের মাঝখানে ছ’ইঞ্চির ব‌্যবধান থাকবে।
  • হাতের চেটো ছাদের দিকে মুখ করে থাকবে।আঙুলগুলো থাকবে অল্প ভাঁজ অবস্থায়
  • শিশুর মুখে যেমন স্বর্গীয় হাসি লেগে থাকে, তেমন হাসি ধরে রাখতে হবে মুখে।
  • তারপর এই হাসিকে সূর্যকিরণের মতো ঘাড়, কাঁধ, গলা বুক, পেট, কোমর, হাত-পায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে হবে শরীরের সমস্ত পেশি যেন শিশুর মতো খিলখিলিয়ে উঠছে।
  • যদিও শবাসনের নিয়ম মেনেই মৃতদেহের মতোই থাকতে হবে নিশ্চল।
  • মনে মনেও কোনও অঙ্গ সঞ্চালনের কথা ভাবা যাবে না।
  • এরপর ঘরের বাইরে হওয়া আওয়াজগুলো একটা একটা করে শুনতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। শেষ হলে ঘরের মধ্যে মনোযোগকে টেনে আনতে হবে।
  • ঘরের ভিতরে হওয়া আওয়াজগুলো শুনতে হবে। নিজের শরীরের সঙ্গে মেঝের সংযোগকে অনুভব করতে হবে। অনুভব করতে হবে যোগাম‌্যাটের সঙ্গে নিজের মাথা, কাঁধ, পিঠ, কোমর এবং পায়ের স্পর্শকে।
  • প্রবল ঘুম আসবে, তবে ঘুমিয়ে পড়া চলবে না। প্রথম দিকে যোগ প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে অভ‌্যাস করতে হবে। রপ্ত হয়ে গেলে নিজে থেকেই যোগনিদ্রা করা যাবে।
  • গোটা প্রক্রিয়ায় চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কল্পনা করতে হবে আপনার শরীরের চারপাশে আয়না লাগানো রয়েছে। প্রথমে মাথার উপরে থাকা আয়নায় নিজের যৌগিক চেহারাকে কল্পনা করতে হবে। এরপর ডানদিক এবং বাঁদিকের আয়নায় নিজেকে দেখতে হবে। কিছুক্ষণ নিজেকে দেখার এই কল্পনা চলবে।
  • পরের পর্যায়ে নিতে হবে সংকল্প। আপনি যদি নিজের মধ্যে কোনও আচরণগত পরিবর্তন আনতে চান বা কোনও রেজোলিউশন নিতে চান, তবে তা নিয়ে ফেলুন। প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্সে তিনবার সেই সংকল্পের কথা মনে মনে আওড়ান।
  • এরপর প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে নিজের মনকে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ধাপে ধাপে সঞ্চালন করুন। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস, নাভিমূলের ওঠানামাকে প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে অনুধাবন করতে হবে। একবার নিজেকে পর্বতের মতো ভারী মনে হবে। পরক্ষণে মনে হবে পাখির পালকের মতো হালকা।

এই যোগিক ক্রিয়া এমন এক তুরীয় অবস্থায় অনুভূতিকে নিয়ে যাবে যে মনে হবে আপনি গভীর ঘুম থেকে উঠলেন। হ্যাঁ, ২০ মিনিটের যোগনিদ্রায় ৫ ঘণ্টা ঘুমের সতেজতা। অলীক কল্পনা নয়। এটা বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App