×

সম্পাদকীয়

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব : জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি সরকারকে ভাবা উচিত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২২, ০১:৫৩ এএম

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির মধ্যে বাংলাদেশেও ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে সোমবার থেকে শুনানি শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ৬৩ শতাংশ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা প্রস্তাব দিয়েছে। দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গণশুনানিতে। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ায় গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আর ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বলছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অনেক পণ্য ও সেবার দামও বাড়বে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পক্ষে পেট্রোবাংলা যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে, সেসবের মধ্যে রয়েছে- দেশীয় ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর গ্যাস উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে, খরচ বেড়েছে এলএনজি আমদানির। আমদানি ও ভোক্তা উভয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর উৎসে আয়কর পরিশোধেও ব্যয় বেড়েছে এবং এর সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিচালন খরচ। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে হলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার বিক্রিমূল্য দাঁড়াবে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হবে সরকারকে। ফলে বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। এর চাপ পড়বে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর। গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য দেখানো হচ্ছে অদ্ভুত সব যুক্তি। সরকার বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ তো বন্ধ করেছেই, এখন পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করতে চায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তাদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে, যার দাম অনেক বেশি। এই দুই ধরনের ব্যবহারকারীর মধ্যে বৈষম্য কমানোও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণে নাকি বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, পাইপলাইনের গ্যাস ও সিলিন্ডার গ্যাসের দামের ব্যবধান কমাতে পাইপের গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে কেন? সিলিন্ডারের গ্যাস সুলভ ও সহজলভ্য করার কথা তো সরকার থেকে অনেকদিন ধরেই বলা হচ্ছে। কিন্তু তার তো কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গ্যাসনির্ভর শিল্পোৎপাদনের ব্যয় বাড়লে উৎপাদিত পণ্যমূল্যও বাড়াবে। দেখা যাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলবে। গ্যাসের অপচয় বন্ধ করা, সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে স্রেফ দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক চিন্তা নয়। ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটিয়ে শুধু দাম বাড়িয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব মেলানোর প্রবণতা থেকে সরে আসা উচিত সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর। সরকারকে জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App