×

সম্পাদকীয়

বিশ্ব পানি দিবস : সুসংহত পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২, ০১:৪১ এএম

আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে বিশ্ব পানি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন’। ভূগর্ভস্থ পানির অতি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে, সংকট দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির। পানি সংকট মোকাবিলা এবং পানি দূষণের হুমকি রোধে বর্জ্য পানির আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য পানি পরিশোধন ও পুনর্ব্যবহার একটি বড় সমাধান হতে পারে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বর্জ্য পানি একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। বর্জ্য পানির নিরাপদ ব্যবস্থাপনাকে মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের জন্য একটি সঠিক বিনিয়োগ বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পানি দিবস পালন এবং পানি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব পানি দিবসকে সামনে রেখে ভোরের কাগজ ও এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ যৌথভাবে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গত রবিবার এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বক্তারা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এর পরিকল্পিত ব্যবহার, ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের যেমন পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, নদ-নদীর পানির ব্যবহার বাড়ানো এবং শিল্পকারখানায় পানি পুনর্ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতেও গুরুত্ব দেয়া হয়। বৈশ্বিকভাবে ৮০ ভাগ পানি দূষিত হয়ে পরিবেশে চলে যাচ্ছে। যা একদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। পৃথিবীর ১৮ বিলিয়ন মানুষ অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ৬৬৩ মিলিয়ন মানুষের নির্দিষ্ট কোনো পানির উৎস নেই। বৈশ্বিকভাবে ৫০ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করে। পৃথিবীর মাত্র ৫৫টি দেশে বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। অন্য কোনো দেশের এ বিষয়ে তথ্যও নেই। বাংলাদেশও এর মধ্যে পড়ে। দুঃখের বিষয় বর্জ্য পানির ৯২ শতাংশই অপরিশোধিত অবস্থায় পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। তার জন্য পরিবেশের অনেক বেশি দূষণ ঘটে। ঢাকায় যে পরিমাণ বর্জ্য পানি তৈরি হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পানি ও বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের বিশেষ জোর দিতে হবে। বাংলাদেশে পানি সংক্রান্ত সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশের ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশের নদীর পানি স্রোত না থাকায় তা সমুদ্রে মিশছে না। ফলে এসব অঞ্চলে আগের চেয়ে ৩ গুণ বেশি লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত তোলার ফলে ৪৭টি জেলার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাছাড়া পানি দূষিত হওয়ার কারণে দেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায়, এসব বন্ধ করার জন্য সুসংহত পানি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রয়োজন। বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা নীতি রয়েছে, তা অনেক পুরনো। একে সময়োপযোগী করতে হবে। এই নীতির পলিসি নবায়ন করা দরকার। যুগোপযোগী পানি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নের সঙ্গে পানি, জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা বা সরকারি বিভাগগুলোর সমন্বয়ও বিশেষ প্রয়োজন। আমরা আশা করব সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App