×

জাতীয়

পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো যোগ দিল চীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২, ০৯:২১ পিএম

পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো যোগ দিল চীন

ওআইসি সম্মেলনে ৪৬ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টারস (সিএফএম) এর ৪৮তম অধিবেশন মঙ্গলবার থেকে পাকিস্তানে শুরু হয়েছে। ‘একতা, ন্যায় ও উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা’ প্রতিপাদ্যে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট মুসলিম দেশগুলোর দুই দিনব্যাপী বার্ষিক এই সম্মেলন বুধবার শেষ হবে।

বৈঠকে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রায় ৪৬টি মুসলিম দেশ অংশ নিয়েছে। বাকিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এই প্রথম কোনো চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিলেন। মুসলিম বিশ্বের এই সম্মেলনে চীনের অংশ নেয়াটাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, অনুষ্ঠানে চীনের অংশগ্রহণ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলাপচারিতা তাদের সম্পৃক্ততাকে আরো জোরদার করবে। চীন ছাড়াও, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘ, রাশিয়ান ফেডারেশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ওআইসির সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

আফ্রিকা ও ইউরোপের মুসলমানদের সমস্যা এবং ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া এবং সিরিয়ার উন্নয়ন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হবে। আলোচ্য সূচিতে ইসলামোফোবিয়া এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস সম্পর্কিত বিষয় এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, মানবিক এবং বৈজ্ঞানিক ডোমেনে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইসলামাবাদের সংসদ ভবনে ও আইসি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, ওআইসির মাধ্যমে আমরা ফিলিস্তিনি এবং কাশ্মীরের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি দুঃখের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা কোনো প্রভাব ফেলতে পারিনি। পশ্চিমা দেশগুলি ‘ওআইসিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়নি’ কারণ আমরা একটি বিভক্ত ঘর। আমরা (মুসলিম) দেড় বিলিয়ন মানুষ এবং তবু এই নির্মম অবিচার বন্ধ করার জন্য আমাদের আওয়াজ তুচ্ছ।

২০১৯ সালের আগস্টে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (ভারত) কোনো চাপ অনুভব করে না। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ওআইসি মূল ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ না হলে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটতে থাকবে, যেমন ‘ফিলিস্তিনে দিবালোকে ডাকাতি’।

ইসলামকে কেন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনা করা হলো প্রশ্ন তুলে ইমরান বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে মুসলিম বিশ্ব মুসলিমদের এই ভাবমূর্তিকে মোকাবেলা করতে পারেনি। মুসলিম দেশগুলোর প্রধানদের এ বিষয়ে অবস্থান নেয়া উচিত ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব ‘ভুল পথে চলেছে। একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধ প্রায় শুরু হয়ে গেছে এবং বিশ্বকে ব্লকে ভাগ হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দেড় বিলিয়ন মুসলমান যদি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান না নেয়, আমরা কোথাও থাকব না। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান পরামর্শ দিয়েছেন, ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনা করা উচিত কীভাবে সংস্থাটি মধ্যস্থতা, যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসান ঘটাতে চেষ্টা করতে পারে।

এর আগে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি জোর দিয়েছিলেন যে ফোরামটি মুসলিম দেশ এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব সমাধানে ভূমিকা তুলে ধরে। কুরেশি বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমান এবং ভারতীয় অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এখনও জঘন্য পরাধীনতার মধ্যে ভুগছে। গত সাত দশক ধরে, তারা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, মুসলিম দেশগুলোতে ঘন ঘন বহিরাগত হস্তক্ষেপের কারণে মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী সমস্ত শরণার্থীর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে এসেছে- সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার এবং সোমালিয়া। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ, ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডক্টর মুহাম্মদ সুলেমান আল-জাসের, চীনা স্টেট কাউন্সিলর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ্গি ই সেশনে বক্তব্য দেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একটি ভিডিও বার্তাও দেখানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে চীনঃ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য অটল সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, জাতিসংঘে ইসলামি বিশ্বের সমর্থন চীন কখনো ভুলতে পারবে না। চীন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তানের বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, চীন শান্তি, উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ৫৪টিরও বেশি দেশ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ, যা ২০১৩ সালে চীনা সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল। চীনা মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, আলোচনা এবং সংলাপের মাধ্যমে দেশগুলির মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো উচিত। চীন ইসলামিক বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, চীন দুই দেশের মধ্যে আলোচনা সমর্থন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App