ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট অগ্নিগর্ভ। এক তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার পর ১০ জনের ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার করেছে দমকল বাহিনী।

সোমবার (২১ মার্চ) রাত থেকে অগ্নিগর্ভ বীরভূমের রামপুরহাট। জ্বলছে একের পর এক বাড়ি। রাতেই উদ্ধার তিনজনের ঝলসানো মৃতদেহ। মঙ্গলবার সকালে আরো সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। এলাকার তৃণমূল নেতা তথা রামপুরহাট এক নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন। স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে তিনি বসেছিলেন। সে সময় একদল দুষ্কৃতী ওই চায়ের দোকানে এসে বোমা ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপরেই এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ, বগটুই গ্রামে পর পর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে একটি বাড়ি থেকে সাতজনের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। দমকল জানিয়েছে, সোমবার রাতেই অন্য একটি বাড়ি থেকে তিনজনের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার কথা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরো বেশ কিছু বাড়ি থেকে আরো কিছু মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ জনের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে। তবে পুলিশ বা প্রশাসন এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রামপুরহাট হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে এক যুবক, দুই নারী এবং একটি বাচ্চা আছে৷

ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বীরভূমে তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মন্ডল বলেন, ‘‘টিভি ফেটে আগুন লেগে গেছিল বলে শুনেছি। আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। ফলে বাকিটা বলতে পারব না।” এরপরেই অবশ্য অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাদু শেখ খুনের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। পুলিশ সুপার অবশ্য খুনের ঘটনার সঙ্গে আগুন লাগার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে আগুন লাগলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা থেকে ঘটনাস্থলে রওনা হন বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। হেলিকপ্টারে বীরভূমে পৌঁছান তিনি। বেলার দিকে রামপুরহাট রওনা হন অনুব্রত মন্ডলও। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় থানার ওসি-কে ক্লোস করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে স্থানীয় এসডিপিও-কে।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাজ্য সিপিএম-এর নতুন সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাওয়া হয়েছে। সিপিএমের প্রতিনিধিদল এলাকায় যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী বিধায়কেরা। সব মিলিয়ে রামপুরহাটের ঘটনা কার্যত গোটা রাজ্য জুড়েই উত্তাপ ছড়িয়েছে।