×

সম্পাদকীয়

শতভাগ বিদ্যুতায়ন : নিরবচ্ছিন্ন, ব্যয় সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ০১:৩৩ এএম

শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ বছরে ৫৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়ন করেছে। এর আগে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়। বিদ্যুৎ পরিষেবা ৪৭ শতাংশ থেকে শতভাগে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। হাতিয়া, কুতুবদিয়া ও নিঝুম দ্বীপে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ শতভাগ বাস্তবায়নে বিদ্যুতায়নের মাইলফলক স্পর্শ করছে বাংলাদেশ। চরাঞ্চল থেকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কোনো জনগোষ্ঠীই এখন বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বাদ পড়ছে না। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। এ অগ্রগতি আশা জাগানিয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদন- এই অর্জন যে কোনো দেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিদিন ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা দেয়া হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালনায় দুর্বলতার কারণে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা সমস্যা আছে। সিস্টেম লস এখন সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। গ্রিড সাবস্টেশনের প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা আছে, কিন্তু সব জায়গায় বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। ২০২৪ সাল নাগাদ এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। সরকার নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর সুফল দেখা যাচ্ছে। তারপরও বাস্তবতা হলো, লোডশেডিং নিয়ে মানুষের ভোগান্তি একেবারে দূর হয়নি। শহরে সমস্যাটা প্রকট না হলেও গ্রামের পরিস্থিতি স্থান বিশেষে নাজুক। আবার শিল্প-কারখানায়ও চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য জ্বালানির সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে ব্যবহার করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। শুরু থেকেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বড় অংশ তেলনির্ভর। অথচ এখন বিশ্বে জ্বালানি তেল দুর্মূল্য। অন্যদিকে দেশে চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদনও পর্যাপ্ত নয়। একদিকে গ্যাস সংকট, তার ওপর সারের জন্য ইউরিয়া সার কারখানায় জরুরি গ্যাস সরবরাহ দিতে গিয়ে গ্যাসভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র মৌসুমে বন্ধ রাখতে হয়। অর্থাৎ চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না হওয়ায় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোও সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে না। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে আমদানিসহ নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে জরুরিভিত্তিতে চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারের নেয়া কিছু ব্যবস্থা বিরূপ সমালোচনারও খোরাক হয়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মনোযোগ সময়োপযোগী। এছাড়া ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা ও গতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান আমরা আশা করতেই পারি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা আমদানি সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিফলন দরকার। সব ক্ষেত্রে যাতে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায় সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App