×

খেলা

একাদশে মাহমুদুল্লাহর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ১০:০০ পিএম

একাদশে মাহমুদুল্লাহর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম ম্যাচ জয় ও দ্বিতীয় ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একাদশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমর্থকদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলে থাকা নিয়ে।

প্রথম ম্যাচে রিয়াদ ১৭ বলে ২৫ রান তুলে দলকে তিনশো পার করতে সাহায্য করেছেন, দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দল যখন বিপদে, ৫০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে, যখন ইনিংস গঠনের সময় ঠিক তখন এমন একটা শট খেলায় রিয়াদের শট নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। খবর বিবিসির।

জামাল মোল্লা বলেছেন, "শুধু পান্ডব বলেই কাউকে যাতে দলে না রাখা হয়।" রিয়াদ সিনিয়র ক্রিকেটার ট্যাগ নিয়েই খেলে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আবার এর বিরোধিতাও করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরন করেন এমন একজন রাকিব হাসান প্রান্তর মতে, "রিয়াদ কখনো ছয়, কখনো সাত আবার কখনো আটে খেলেছেন। এভাবে তাকে নিয়ে একটা দ্বিধায় রাখা হয়েছে।"

এভাবে টানা খেললে অনেক সময় ভালো খেলা কঠিন হয়ে পড়ে বলেই মনে করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে প্রতিপক্ষের সাজানো ফাঁদে খুব সহজেই ধরা পড়েন রিয়াদ, তাবরিজ শামসির বলে লেগ স্লিপে বসা জানেমান মালানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন, দেখে মনে হয়েছে নেটে ক্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছেন কেউ।

তবে এক ম্যাচ বা দুই ম্যাচ দেখে এমন প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয় বলে মনে করছেন অনেকে। আবার অনেকে বলছেন আফিফ হোসেন যেহেতু নিয়মিত ভালো করছেন, তাকে রিয়াদের জায়গায় পদোন্নতি দিয়ে খেলানো যেতে পারে।

বাংলাদেশের অনুশীলন মাঠে থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন আসিফ আফনান পিয়াল তার মতে রিয়াদকে যদি খেলাতেই হয় তবে পাঁচে খেলানো উচিৎ, তিনি বলেন, "রিয়াদের তৎপড়তা কমে গেছে, আগের মতো রিফ্লেক্স নেই। বয়সের কারণে খুব বেশি আপগ্রেড করারও সুযোগ নেই এখন।"

তবে এখনই রিয়াদকে বাদ দেয়ার বিষয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন তিনি, "একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিৎ। সাতে আফিফ নিয়মিত খেলছে ও ভালো খেলছে, এই প্লেয়ারকে ছয়ে খেলালে সেখানে শুণ্যতা তৈরি হবে।"

বাংলাদেশের ক্রিকেটের গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেয়া নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, "রিয়াদের ইস্যুটা আসলে ও সবচেয়ে ভালো বুঝবে ওর যদি মনে হয় যে হচ্ছে না, তাকে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিৎ।"

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদ সাংবাদিকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, "আপনাদের কি দলে আমার জায়গা নিয়ে সংশয় আছে?"

২০২১ সালের মে মাসে শেষ ফিফটি করেছেন রিয়াদ, এর মধ্যে সুযোগ পেয়েছেন অনেক ম্যাচে ইনিংস বড় করার, প্রায়ই বাংলাদেশের টপ অর্ডারে ধস দেখা গেছে এবং রিয়াদ যথেষ্ট সময় পেয়েও দেখা গেছে ইনিংস বড় করতে পারেননি।

ঠিক জোরাজুরি করে কাউকে সরানোর পক্ষে নন ফাহিম। তবে একই সঙ্গে 'সংশয়হীনভাবে' কাউকেই দলে রাখার পক্ষে নন এই বিশ্লেষক ও ক্রিকেট পর্যবেক্ষক।

তার মতে, "বাংলাদেশ এখন খুব ভালো একটা ওয়ানডে দল, যাদের উচিৎ প্রতিটা ম্যাচই জয়ের জন্যই খেলা, এখানে ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে না।"

"একেবারে সংশয়হীনভাবে দলে থাকতে পারে এমন ক্রিকেটার কিন্তু অনেকেই নেই, আমরা এখন প্রত্যেকে ম্যাচ জেতার জন্য খেলি।"

"বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে ইয়াসির আলি রাব্বি দেখিয়েছেন, তিনি পারেন, আফিফ এখন শক্ত অবস্থান নিয়েছেন একাদশে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে পজিশনে তিনি ব্যাট করছেন তার চেয়ে ওপরে খেলার যোগ্য। এসব ব্যাপার দলে কাউকেই চিরস্থায়ী হতে দেবে না।"

ক্রিকেট পর্যবেক্ষক তৌসিয়া ইসলামের মতে, "যখন কোনও ক্রিকেটার নিজেকে প্রমাণ করতে থাকে তাহলে তাকে সেই পরিমাণ সুযোগটাও দেয়া উচিৎ। টিম ম্যানেজমেন্ট আবার ভাবছে টপ অর্ডার নিয়মিত দ্রুত আউট হচ্ছে, এতে আফিফ আর মিরাজকে বিপদ সামলাতে হচ্ছে।"

কিন্তু আফিফের জায়গা থেকে চিন্তা করলে, যত ওপরে খেলবেন ততই তিনি আরও উন্নতি করবেন বলে মনে করেন মিজ ইসলাম। তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্ষেত্রে নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও তৌসিয়া ইসলাম একটা জায়গায় একমত, বাইরের কথা ও সমালোচনা রিয়াদের মধ্যে বেশ গভীর দাগ কাটছে।

বিশেষত তার সাক্ষাৎকারগুলোতে এবং সংবাদমাধ্যমে নানা কথায় মাঝেমধ্যেই এটা প্রকাশ পায়, যেমন আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাঠে নামার আগে রিয়াদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন করার পর তিনি বলেন, "পরের ম্যাচ থেকে প্রথম বল থেকেই চার-ছয় মারবো।"

তৌসিয়া ইসলাম মনে করেন, "রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের একটা ইনিংস দরকার হয় ফিরতে, সেই ইনিংসটাই তিনি পাচ্ছেন না।"

একই সঙ্গে রিয়াদের মনোসংযোগটা কমে গেছে বলে মনে করছেন তিনি, শুধু ব্যাটিংয়ে না, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচও ছেড়েছেন রিয়াদ।

ব্যাটিং টেকনিক আর ক্যাচ ধরার জন্য পুরোপুরি খেলার প্রতি মনোনিবেশ করাটা জরুরি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা, কারণ ওই সময়টায় সমালোচনা ও বাইরের কথায় বেশি মাথায় কাজ করলে ক্রিকেট খেলাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের পর বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালকে রিয়াদের দলে গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "রিয়াদ ভাই এখনো দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার। তাকে নিয়ে নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্ট কেউই তেমন কিছু ভাবছে না।"

আফিফকেও সাতেই খেলানোর পক্ষে তামিম ইকবাল, তিনি বলেন তখন আবার সাতে খেলার জন্য ব্যাটসম্যান খুঁজতে হবে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আগের মতো বল পেটাতে পারেন না তিনি। দু হাজার একুশ সালের শুরু থেকে ১৫ ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে ৭৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন রিয়াদ। কিন্তু বাংলাদেশের ওয়ানডে দলটি নিয়মিত জয় পেলেও টপ অর্ডারের ব্যর্থতা দলটির নিয়মিত সঙ্গী।

এসব ক্ষেত্রে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ব্যাট হাতে নামতে হয় যেখানে উইকেট ধরে রাখাই বড় কাজ হয়ে দাঁড়ায়। দু হাজার একুশ সালের শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ, সেই সিরিজে শেষ বাংলাদেশের টপ অর্ডার ১০০ রান পার করতে পারে সব ম্যাচে।

এরপর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই ১৩১ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ ৬৯ রানের মাথায় চার উইকেট হারায়। দ্বিতীয় ম্যাচে তুলনামূলক ভালো করলেও, তৃতীয় ম্যাচে আবার বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে ৪৮ রানে, এই ম্যাচে রিয়াদ ৭৬ রান তোলেন।

এরপর বাংলাদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে যথাক্রমে ৯৯, ৭৪ ও ৮৪ রানে। একটি ম্যাচেও চার উইকেট হারানোর আগে ১০০ তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়েতেও একই পরিস্থিতি, হারারেতে প্রথম ম্যাচে ৭৪ রানে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৫ রানে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। এই কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ১৮ রানেই চার উইকেট চলে যায়, ৪৫ রানে ছয় উইকেট।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টপ অর্ডার ভালো করলেও, তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ১০০ থেকে ১৯২ রানে যেতেই নয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App