×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: যুদ্ধংদেহী আচরণ ছেড়ে সহনশীল যুক্তরাষ্ট্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২২, ১০:২৩ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: যুদ্ধংদেহী আচরণ ছেড়ে সহনশীল যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: যুদ্ধংদেহী আচরণ ছেড়ে সহনশীল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র এ শতাব্দীতে একটি নয় দু দুটো দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান বিভীষিকার পরও দেশটি এখনও মুখে যুদ্ধে জড়ানোর কথা বলছে না। ইরাক যুদ্ধের সময় হামলার চালানোর হুমকি দিয়েছিল। তারাই এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক আচরণ করছে। বিকল্প কোনো পথ কি আমেরিকার কাছে আছে যেটা তাদের স্বার্থ হাসিল করবে? খবর বিবিসি বাংলার।

নিজে উদ্যোগ নিয়ে শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দু'ঘণ্টা ধরে কথা বলার ভেতর দিয়ে প্রমাণ হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানো আমেরিকার জন্য কতটা কঠিন।

চীনের ওপর আমেরিকার প্রভাব খুবই কম। ওই বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতে মনে হয় না দুই ঘণ্টার টেলিফোনে কাজ কিছু হয়েছে।

কিন্তু তার ক্ষমতার প্রথম বছরে বাইডেন যে মনোভাব দেখিয়েছেন তার চেয়ে এখন তিনি যা করছেন তা অনেকটাই আলাদা। কূটনীতি এখন তার ধ্যানজ্ঞান।আফগানিস্তান নিয়ে একরোখা আচরণ দেখিয়েই প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে থেমে গিয়েছিলেন তা নয়। সেপ্টেম্বর মাসে হোয়াইট হাউজ হঠাৎ করে ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নিরাপত্তা জোট তৈরির ঘোষণা দেয়।

[caption id="attachment_340835" align="aligncenter" width="700"] প্রেসিডেন্ট বাইডেন।[/caption]

আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার অবস্থা হয় ফ্রান্সের। কারণ তারা যে সাবমেরিন বহর বিক্রির চুক্তি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে করেছিল সেটি ভেস্তে যায়। প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রর অফিস থেকে বলা হয় 'অকাস' নামে এই জোট তৈরির কথা তারা খবরের কাগজে পড়ে জানতে পারে।

সবচেয়ে পুরনো একটি বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে আমেরিকার ওই আচরণ ছিল নজিরবিহীন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগে আমেরিকা দেয়া ঘন ঘন সতর্ক বার্তায় ইউরোপীয় দেশগুলো দেশ কান দিচ্ছিল না।

আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা হোক বা বর্তমান পরিস্থিতির ভিন্ন বাস্তবতার কারণেই হোক, ইউক্রেন সংকটকে হোয়াইট হাউজ আগের বহু সংকটের চেয়ে ভিন্নভাবে সামলানোর চেষ্টা করছে।

শুরু থেকেই আমেরিকা তার মিত্রদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছে। ভেতর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে এসব শলা পরামর্শের সময় আমেরিকানরা ইউরোপীয় মিত্রদের অধস্তন বিবেচনা না করে তাদের সম-মর্যাদার মিত্র হিসাবে বিবেচনা করছে। যেভাবে তাদের সঙ্গে আমেরিকানরা অত্যন্ত গোপন এবং স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করছে তা নজিরবিহীন।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর এক মাস আগে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ৭ই ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন সফরে আসবেন।

সবে ক্ষমতা নেওয়া জার্মান চ্যান্সেলরের ওই সফর থেকে ইঙ্গিত মিলছিলো বাইডেন প্রশাসন হয়তো বুঝতে পারছিল ইউক্রেন পরিস্থিতি কী হতে যাচ্ছে এবং তার জন্য কী করা জরুরি।

সাদ্দাম হোসেন যখন ১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করেন, সৈন্য পাঠানোর জন্য আমেরিকা প্রায় সারা পৃথিবীর কাছ থেকেই প্রায় জোর করে সমর্থন আদায় করেছিল। ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন কসোভোতে নেটো বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নাইন-ইলেভেনের পর ইরাকে সামরিক অভিযানের জন্য প্রায় জবরদস্তি করে একটি সামরিক কোয়ালিশন তৈরি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফি সরকারকে উৎখাতের অভিযানে যোগ দিয়েছিল আমেরিকা।

কিন্তু এখন আমেরিকা ধৈর্য ধরার পথ নিয়েছে। যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আবেগি বক্তব্য বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনও টলছেন না। বড়জোর তিনি ইউক্রেনের অস্ত্র পাঠাচ্ছেন। সাইবার প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন। সাময়িকভাবে এর চেয়ে তিনি অন্য কিছু করবেন তা মনে হচ্ছে না।

হোয়াইট হাউজ বার বার বলছে, আমেরিকান সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেও যুদ্ধ হয়তো থামানো যাবে না। বরঞ্চ তাতে পরিস্থিতির অবনতি হবে। যে কারণে হোয়াইট হাউজ মস্কোতে ক্ষমতা পরিবর্তন বা রাশিয়ায় গণতন্ত্রের কথা উচ্চারণ করছে না।

আমেরিকা মনে করছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে চুপ থাকলে মৃত্যুর মিছিলে লোক বাড়তেই থাকবে, রাশিয়া নেটো জোটের কোনো দেশেও হামলা চালিয়ে বসবে।

কিন্তু সেই সম্ভাবনা রোখার জন্য বড় কোনো সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য সর্বনাশা পরিণতির কথাও আমেরিকার মাথায় রয়েছে। আমেরিকা জানে, সমাধান সহজ নয় সে কারণেই খুব সাবধানে হাঁটছে হোয়াইট হাউজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App