×

সম্পাদকীয়

মশা নিধনে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২২, ১২:২৫ এএম

রাজধানীতে কিউলেক্স মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশা নির্মূলের মূল দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ওয়ার্ডভিত্তিক মশক নিধন শ্রমিকদের দিয়ে যেভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ হয়েছে, এখন তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শীত-পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে বসন্তে সারাদেশে মশার উপদ্রব বাড়ে। এই সময়ে দেশের যে কোনো জায়গায় বছরের অন্য সময়ের তুলনায় মশা অনেক বেশি হয়। এবারো তাই হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত (১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫৫ জন। মশা বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর, বন্দর আর গ্রামের অবস্থা ভিন্নতর। প্রধানত আলোচনায় শহরের কথাই উঠে আসে, তাই শহরকেন্দ্রিক ভাবনাই প্রাধান্য পায়। আবদ্ধ পানি, উন্মুক্ত ড্রেন ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা রাজধানীতে মশার বংশবিস্তারের প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে। এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। জানা যায়, ঢাকা শহরের সর্বত্রই এখন কিউলেক্স মশার মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, ডেমরা, শ্যামপুর, দনিয়া, পল্টন, হাজারীবাগ এলাকায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ লোকজন। বাসাবাড়ি, অফিস সব জায়গার চিত্র একই। অভিজাত গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারাও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। প্রকৃত অর্থে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এ কার্যক্রম এখন দেখা যায় না। এছাড়া মশক নিধনের বেলায়ও বৈষম্য রয়েছে। বিশেষ বিশেষ স্থান ও এলাকায় যথারীতি ও নিয়মিত মানসম্পন্ন ওষুধ ছিটানো হলেও অন্য এলাকায় তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও মশার উৎপাতে সারা বছরই অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও নানা অভিযোগ নগরবাসীর। নগরবিদরাও বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সংস্থা দুটির নানা ব্যর্থতার কথা। দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য বলছে, মশক নিয়ন্ত্রণে তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে আবারো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকবে। বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের, এটা নগরবাসীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেননা কিউলেক্স মশার প্রজনন স্থান ডোবা-নালায় জমে থাকা পানিতে। আর ঢাকা শহরে এটা পরিষ্কারের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হলে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশক নিধনেও পড়বে। সরকারি-বেসরকারি সব মহলের সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে- এটাই প্রত্যাশিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App