×

জাতীয়

দৃকের আয়োজনে নারী সম্মেলন: সাংবাদিকতায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২২, ০৯:২৯ পিএম

দৃকের আয়োজনে নারী সম্মেলন: সাংবাদিকতায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

দৃকের নারী সম্মেলনে অংশ নেয়া নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরে নারী সাংবাদিকদের নিয়ে সম্মেলন করেছে দৃক। নারী সাংবাদিকদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, পেশাগত সাফল্য এবং সংগ্রামেরে গল্প উঠে আসে এই আয়োজনে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো সারা দেশে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে যোগাযোগকে শক্তিশালী করা এবং সমষ্টিগতভাবে নারী সাংবাদিকদের দাবী নিয়ে আলোচনাকে জোরদার করা।

রবিবার (২০ মার্চ) দৃকপাঠ ভবনে এই নারী সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিমুন আরা হক মিনু। তিনি নারীদেরকে সাহস নিয়ে সাংবাদিকতায় এগিয়ে যেতে বলেন।

এছাড়া তিনটি প্যানেলে বিভিন্ন জেলার নারী সাংবাদিকরা সাংবাদিকদের শ্রম অধিকার, নিউজরুমের পিতৃতন্ত্র, এবং বিভিন্ন নিপীড়নমূলক আইনের দ্বারা হয়রানির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সিলেট জেলার অগ্রজ সাংবাদিক মনিকা ইসলাম বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং মিডিয়া হাউজে শিশুকেন্দ্র না থাকার নারী সাংবাদিকরা পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পিছিয়ে পড়ে।

বগুড়ার জেলার সাংবাদিক শাপলা খন্দকার সোমা বলেন, নিউজ এডিটিং পলিসি ও প্র্যাক্টিসে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিউজ বিক্রির তাগিদ থেকে নারীদের উপর অনেক সময় মতাদর্শিক আক্রমণ করা হয়। এই নিউজ তৈরির ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইনের প্রয়োজন আছে।

মৌলভীবাজারের সাংবাদিক এস এ কাকন, বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোতে প্রেসক্লবা বা সাংবাদিক সংগঠনগুলো প্রধাণত ছেলেদের ক্লাব। এখানেও যৌন হয়রানির কারণে নারী সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহন করতে পারে না। নারীর জন্য প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়াও অনেক কঠিন।

নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, নারী সাংবাদিক কোনো কথা নয়, আমরা সবাই সাংবাদিক। সাংবাদিকতা মানেই চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জিং এই পেশায় মামলা, হামলা, যৌন হয়রানির ঘটনা থাকবেই। এগুলো মোকাবেলা করে নিজেদের স্থান তৈরি করে নিতে হবে।’

এসময় হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে প্রতিটি মিডিয়া হাউসে তদন্ত কমিটি গঠন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ ১৩টি দাবি তুলে ধরেন তিনি।

এতে অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক নিয়াজি মান্না বলেন, প্রতিটি নেতৃত্বের জায়গায় নারীদের উপস্থিতি থাকতে হবে। প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিটি পদে নারী সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এবং নারীদের একত্রিত হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে নারী সাংবাদিকদের অধিকারের জায়গাটি আরো পোক্ত হবে।

ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নারী সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি বলেন, নারীদের পথে অনেক সময় নারীরাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই পুরুষ সহকর্মীরা সাহস পায় নারী সহকর্মীদের নানাভাবে হেনস্থা করতে।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীরা তুলে ধরেন তাদের বঞ্চণার কথা। সেই সঙ্গে কিভাবে নারী সাংবাদিকরা সাহসের সাথে নিজেদের কর্মস্থলে টিকে আছেন, নিজেদের পেশা ধরে রেখেছেন, সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। দৃকের পক্ষ থেকে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ এবং সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ উপস্থিত ছিলেন।

সায়দিয়া গুলরুখ বলেন, দৃঢ়চিত্ত, আত্মনির্ভরশীল নারীদের সমাজ ও রাষ্ট্র ভালো চোখে দেখে না। কটাক্ষ করে। ভয় পায়। এই কটাক্ষকে উপেক্ষা করে নূরজাহান বেগম, সেলিনা পারভীনসহ আরও জানা, অজানা অগ্রজ বোনেরা বাংলাদেশে নারীদের সাংবাদিকতার পথ, লেখক হিসেবে আত্মপরিচয় গড়ে তুলবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এই সম্মেলনের নারী সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি নিজ পেশায় টিকে থাকার এই সংগ্রাম কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

দৃক বিগত অক্টোবর ২০২১ "বাংলাদেশে সাংবাদিকতা: নারী সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা" নিয়ে একটি গবেষণা কাজের উদ্যোগ নিয়েছে। এই গবেষণার অংশ হিসেবে ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরে নারী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে, শুনেছে তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, পেশাগত সাফল্য এবং সংগ্রামেরে গল্প।

এই কাজের উপর ভিত্তি করে দৃক পিকচার লাইব্রেরি বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতা: ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা শিরোনামে রাজধানীর পান্থপথের দৃক গ্যালারিতে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীটি শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় উদ্বোধন করা হয়।

এই প্রদর্শনীটি শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে উৎসর্গ করা হয়েছে। উদ্বোধনী আয়োজনে তাঁর ভ্রাতা শাহাবুদ্দিন শেলীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App