×

জাতীয়

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২২, ১০:৪৬ এএম

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই। আজ শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর সিএমএইচে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শোক প্রকাশ করেছেন।

বুধবার রাতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের বিচারপতি আহমেদের জামাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেময়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ; তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন নান্দাইলে তার বোনের বাড়িতে বড় হন। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। তিনি তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রয়াত ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। দ্বিতীয় কন্যা সামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার পুত্র শিবলী আহমেদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী ও আরেক পুত্র সোহেল আহমেদ কলেজছাত্র। সর্বকনিষ্ঠা কন্যা সামিয়া পারভীন চারুকলা কলেজের ছাত্রী।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

সাহাবুদ্দীন আহমদ তার কর্মজীবনে প্রথমে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তাকে হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়।

১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে তার দেয়া বহুসংখ্যক রায় প্রশংসিত। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তার দেয়া রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।

১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন সরকার তার সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। সে বছর ৬ ডিসেম্বর এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। সেদিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর ফলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নেতৃত্বে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়।

সাহাবুদ্দীন আহমদের চাহিদা অনুসারে দেশের সংবিধানের এগারোতম সংশোধনীটি আনা হয়। এর ফলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পরও তিনি ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান এবং ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদ আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ওই বছর ক্ষমতায় এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App