×

আন্তর্জাতিক

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:১৬ এএম

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

ফাইল ছবি

চীন-রাশিয়া নিয়ে উভয় সংকটে সৌদি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

ইউক্রেন সংকটে চীন-রাশিয়াকে কেন্দ্র করে উভয় সংকটে পড়েছে সৌদি আরব। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেল উৎপাদনে চাপ প্রয়োগ করেছে। কিন্তু এ দুই দেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট এবং সৌদি রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এছাড়া সৌদির মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়েও হরহামেশাই পশ্চিমাদের সমালোচনা হতে থাকে।

[caption id="attachment_340567" align="aligncenter" width="700"] সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সরাসরি চুক্তিতে আগ্রহী নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন[/caption]

এ কারণেই এখন পর্যন্ত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক শীতল হওয়ার কারণে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এমনকি বেইজিং-মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হলেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সৌদির এখনও ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক আছে।

সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর গত মঙ্গলবারই দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন ব্রেট ম্যাকগার্ক ও অন্যান্য মার্কিন প্রতিনিধিরা। এসময় তেল উৎপাদন আরও বাড়াতে এবং ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ বন্ধে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে দেশটিকে চাপ দেন তারা।

সৌদির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের এ বৈঠকের ব্যাপারে দুটি সূত্রের একটি জানায়, সৌদি আরবের দুটি ফাইল (তেল উৎপাদন ও ইয়েমেন যুদ্ধ) ওয়াশিংটন ছেড়ে দেবে এমন ভেবে থাকলে সেটি ভুল হবে।

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়েমেনসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগার্কের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল।

[caption id="attachment_340563" align="aligncenter" width="700"] সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন[/caption]

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ প্রয়োগ ও রুশ হাইড্রোকার্বন থেকে বিশ্বকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ইতোমধ্যেই (পশ্চিমাদের) ‘প্রধান আন্তর্জাতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

কিন্তু আরব আমিরাতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল খালেক আবদুল্লাহ বলছেন, (সৌদি ও আমিরাতের কাছ থেকে) বরিস জনসনের খুব বেশি আশা করা উচিত নয়। টুইটারে দেয়া এক টুইটে তিনি বলেছেন, বরিস খালি হাতেই ফিরে যাবেন।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এ সফরের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সৌদি সরকার। তবে আপাতত পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা এবং রাশিয়াসহ মিত্রদের মধ্যকার ওপেক প্লাস নামে একটি তেল সরবরাহ চুক্তি ত্যাগ করার কোনো লক্ষণ দেখায়নি সৌদি আরব।

এদিকে গত ২ মার্চ ওপেক প্লাসের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার হামলার কারণে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা শুরু করলেও ওপেক প্লাসের মন্ত্রী পর্যায়ের সেই বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুটি এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং বিদ্যমান নীতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

[caption id="attachment_340566" align="aligncenter" width="700"] সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং[/caption]

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক

চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে রিয়াদ। একইসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চলতি বছর সৌদি সফরের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, সৌদি আরব কিছু অপরিশোধিত তেল চীনের কাছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বিক্রি করার জন্য আলোচনা করছে।

সৌদি আরব যদি তা (চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল বিক্রি) করে তবে সেটি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের গতিশীলতা পরিবর্তন করবে। একইসঙ্গে সৌদি তেলের অন্য ক্রেতারাও এটি অনুসরণ করবে।

সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এ বিষয়ে একজন কূটনীতিক জানান, পশ্চিমাদের পেছনে ঠেলে দেয়ার জন্য ‘পুরাতন হুমকির’ দিকে ঝুঁকছে রিয়াদ।

এছাড়া অপরিশোধিত তেলের দাম ডলারে দেয়া হলে সৌদি রিয়াল স্থির বা মজবুত থাকে। অন্যদিকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে একই ভূমিকা পালন করতে পারবে না ইউয়ান।

[caption id="attachment_340569" align="aligncenter" width="700"] সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন[/caption]

চলতি বছর জানুয়ারির শেষে সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪৯ হাজার ২৮০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ছিলো। যার মধ্যে মার্কিন কোষাগারে রক্ষিত আছে এক হাজার ১৯০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি সরকারের সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার দশ কোটি ডলার।

আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনিকা মালিক বলছেন, সৌদি আরব ধীরে ধীরে কিছু বিক্রয় ইউয়ানে স্থানান্তর করতে পারে। তার ভাষায়, ধীরে ধীরে পরিবর্তনের ফলে প্রভাব হবে সীমিত।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যখন রিয়াদে বৈঠক করছিলেন তখনও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ওয়াশিংটন তার মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বলছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App