কর্ণফুলী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২২, ০১:৪৪ এএম
নদীমাতৃক দেশের ইতিহাস ক্রমেই মøান হতে যাচ্ছে। দেশের নদীগুলোর অবস্থা যে শোচনীয় তা নদীর সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। এর পেছনে দখলদারিত্ব থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম জড়িত। চট্টগ্রামের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদী আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দখলের মহোৎসব চলছে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের নদীগুলো রক্ষায় প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কর্ণফুলী নদী যেন কোনোভাবে দূষিত না হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠানে নদী দূষণ ঠেকাতে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অনেক শিল্প কল-কারখানা হচ্ছে। প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্ণফুলী নদী যেন কোনোভাবে দূষিত না হয়, সে ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। সঙ্গে অন্য নদীগুলোরও সুরক্ষা দিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা সময়োপযোগী। অভিযোগ রয়েছে, ১৫ বছরের চুক্তিনামা দিয়ে কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে। কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করছে বন্দর। বিষয়টি দুঃখজনক। এই নদীর সঙ্গে ২ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণ করে। জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। এরপর বড় পরিসরে ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে কর্ণফুলীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ২০১৯ সালেও অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আশানুরূপ কোনো সাফল্য আমরা দেখিনি। এমতাবস্থায় কর্ণফুলী রক্ষা করতে নতুন একটি মহাপরিকল্পনা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা হিমাগারে চলে গেছে। অস্বীকারের অবকাশ নেই যে, মহাপরিকল্পনায় তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা যথার্থ। কিন্তু বাস্তবায়নই যদি শুরু না হয়, যদি নতুন করে দখল চলতেই থাকে; তাহলে মহাপরিকল্পনা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে। নদীগ্রাস আগামী দিনে পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নদীদূষণ ও দখলের খবর পত্রিকায় আসে। নদীদূষণ ও দখল এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী হারাচ্ছে স্বাভাবিক নাব্য। নদীর পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। কর্ণফুলীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার ওপর মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যেভাবেই হোক কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। কারণ চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হবে।