×

সারাদেশ

‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’: রহিমাদের জীবনে ফিরছে স্বচ্ছলতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২২, ০৯:৪৩ পিএম

‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’: রহিমাদের জীবনে ফিরছে স্বচ্ছলতা

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে এখন ফের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন রহিমা খাতুন ও তার পরিবার। ছবি: ভোরের কাগজ

ভোলা জেলার সাহাবাজপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন রহিমা খাতুন (৩৮)। ৪ ছেলে, দুই মেয়েসহ ৮ সদস্যের পরিবার তার। ১৫ বছর আগে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ভিটা-মাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন রহিমা ও তার পরিবারের সদস্যরা। তিন বছর ধরে মানুষের ধারে ধারে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন একটু আশ্রয়ের জন্য, কোথাও স্থান পাননি। এক যুগ পূর্বে নোয়াখালী সদর উপজেলার ভাটিরটেক এলাকায় এসে জেলা শহরের বাসিন্দা এনতাজ মিয়ার জমিতে পাহারাদার হিসেবে ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে আশ্রয় নেন। সেখানেই মেলে নাগরিক পরিচয়পত্র।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণের ঘর প্রদানের জন্য ২০২০ সালে প্রস্তুতকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকায় নাম ওঠে তার। এরপর ২০২১ সালে সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিববর্ষের একটি ঘর উপহার দেওয়া হয় রহিমাকে। সেখানেই জীবনের অনেক বড় দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে রহিমা খাতুনের। স্বামী-সন্তানের আয়- রোজগারের সাথে রহিমাও এখন হস্ত শিল্পের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।

একই আশ্রয়ণে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার পেয়েছেন ছায়েদুল হক (৮০)। তিনি ছিলেন সদর উপজেলার ভাটিরটেক গ্রামের বাসিন্দা। তিন ছেলেসহ ৫ সদস্যের পরিবার তার। বড় দুই ছেলে তাদের খোঁজখবর রাখেন না। ভিটা-মাটিহীন ছায়েদুল হক বাস করতেন অন্যের বাড়িতে। ২০২১ সালে তার কপালে জোটে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। তিনি এখন বাশ-বেত দিয়ে হস্ত শিল্পের কাজ করে ভালোই আয়-রোজগার করছেন। মাত্র কয়েক মাসে বদলে গেছে তার জীবনের চাকা।

শুধু রহিমা-ছায়েদুলই নয়, নোয়াখালী সদরের ধর্মপুর গ্রামের ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করছেন পথহারা ২৪টি পরিবার। এখানে এখন স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটছে ভূমিহীন-গৃহহীনদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই বাসিন্দাদের জীবন-মানের এই পরিবর্তন কেউ কখনোই ভাবেননি। স্বপ্নের ভাবনা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সরেজমিনে নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর ও পূর্ব চরমটুয়া, সোনাইমুড়ি উপজেলার বাংলা বাজার এবং সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, সময়ের সাথে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবন। ভিটা-মাটিহীন ছিন্নমূল মানুষগুলো এখন বসবাস করছে রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে। সেই বাড়িতেই ব্যক্তি উদ্যোগে করছেন শাক-সবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস-মুরগি পালন। আবার কেউ কেউ হস্ত শিল্প, সেলাই কাজসহ নানা কর্মমূখি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই ঘর পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া রহিমা খাতুন, ছায়েদুল হক, মো. ফজলু বলেন, কয়েক মাস আগেও ভাবিনি নিজের ভালো একটা ঠিকানা হবে। এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। নিজেরা হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি- সত্যিই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে শেখ মুজিবের মেয়ে হাসিনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখুক।

নিজেদের জীবনকে আরো কর্মমূখী করে তোলতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের দাবি তোলেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এস এ শাখার তথ্য অনুযায়ী মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর উপহার দিতে জেলায় ২০২০ সালে ৭ হাজার ৫৪২ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের (‘ক’ শ্রেণী) তালিকা প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে সেই তালিকা হালনাগাদ করে ৬ হাজার ৮৪১ পরিবার চুড়ান্ত করে সেই তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৬ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদান করা হয়েছে। তালিকার অবশিষ্ট ২ হাজার ৭৬৩ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য উপহারের ঘরের কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা নানামূখি কর্মকান্ডে নিজেরাই নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো আছেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকিতে ক্রমেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের নানা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুল হক বলেন, উপজেলার ধর্মপুর ও পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৪৮টি পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘর প্রদান করা হয়েছে। ঘরের পাশাপাশি তাদের বসত আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে বাগান, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ, পুকুরে পাকা ঘাটলা, শিশুদের খেলার জায়গা ও খেলনা উপকরণ দোলনা ও স্লিপার। একটি বাসযোগ্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দারা এখন দুশ্চিন্তামুক্ত স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছি। প্রকল্পের বাসিন্দাদের স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং ঋণ প্রদানে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নয়নে তারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। আমরা চাই, ছিন্নমূল মানুষগুলো নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে শিখুক। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App