×

জাতীয়

রুশ জীবনযাপনে ইউক্রেন অভিযানের প্রভাব সামান্যই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২, ১০:৪৬ পিএম

রুশ জীবনযাপনে ইউক্রেন অভিযানের প্রভাব সামান্যই

মস্কোর তুপলিস্তান বাজারের পাশেই রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গতকাল সেই বাজারে গিয়েছিলাম। আগের মতোই জমজমাট সেই বাজার। রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। কেবল বাজার নয়- পাতাল রেল, গণপরিবহন, বিপণিবিতানসহ সবখানেই জীবনযাপন স্বাভাবিক রয়েছে।

বুঝা যাচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না মস্কো। যদিও রাশিয়ায় কয়েক শতাধিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এসব পদক্ষেপের প্রভাব সপ্তাহখানেক থাকলেও সরকারের কৌশলী পদক্ষেপে মানুষের মধ্যে ও বাজারের দামে অস্থিরতা নেই। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গোপনে জিনিসপত্র মজুত করার অভিযোগ ওঠার পর কিছু কিছু দোকানে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্য বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সরকারের কড়া নজরদারির কারণে বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে না। ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। তাই চিকিৎসা খাত পুরোটাই স্বাভাবিক রয়েছে।

ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রুশ মুদ্রা রুবলের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এতে অনেক খুচরা বিক্রেতা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক বছর আগের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিনি ও খাদ্যশস্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। রুশ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস বলেছে, কিছুসংখ্যক খুচরা বিক্রেতা কিছু প্রধান খাদ্যদ্রব্যের দাম ৫ শতাংশের বেশি না বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

সুইফট আন্তর্জাতিক লেনদেনের ব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বাদ দেয়া হয়েছে। ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, অ্যাপল ও গুগল পে রাশিয়ায় তাদের সেবা সীমিত করেছে। রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ৮ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রুবলের মানে পতন এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সুদের হার দ্বিগুণ করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার একাধিক নাগরিকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। রুশরা মনে করেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সপ্তাহ পার হতেই সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছে মস্কো। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার ঘটনার পর পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশির ভাগ খাতে সক্ষমতা অর্জন করে রাশিয়া। তাই চলতি সময়ের নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল অবস্থায় পড়তে হয়নি পুতিন প্রশাসনকে। মস্কো শহরের সবখানেই আগের মতোই সরগরম। পাতাল রেল অব্যাহত, গণপরিবহনে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কে আগের মতোই যানজট দেখা গেছে।

বেশির ভাগ নাগরিক রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন রয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্তে আস্থা আছে তাদের। ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষ্যকে যৌক্তিক মনে করেন তারা। তবে এই অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও হয়েছে। রাশিয়ান গণমাধ্যমে সেসব বিষয়ে প্রতিবেদনও হয়েছে। তবে প্রতিবাদকারীদের সংখ্যাটি বেশি নয়।

রাশিয়ার রুদেন ইউনিভার্সিটির মেডিসিন অনুষদের ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সভাপতি রেজাউল করিম শান্ত বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছর অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা হবে। কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী চাইলে নিজের দেশে থেকেও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবেন। চলতি সেমিস্টারে কারো ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে না বলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বাংলাদেশে থেকে সন্তানদের নিয়ে চিন্তায় আছেন। সবাই ফোন দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। স্বাভাবিক সময়ে এমনটি হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। সেটি দেখেই বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকরা বেশি চিন্তিত। তবে রাশিয়াতে কোনো সমস্যা নেই। রাশিয়ায় জীবনযাপনে খুব বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। আপাতত আমাদের রাশিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা এখানে বেশ ভালো আছি।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি মস্কো, রাশিয়া +৭৯৯৯৭১৬৪৫৪০

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App