×

অর্থনীতি

বাণিজ্য সম্প্রসারণে ঢাকায় রোমানিয়ার দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২, ০৭:২০ পিএম

বাণিজ্য সম্প্রসারণে ঢাকায় রোমানিয়ার দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব

মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক ডায়ালগে শেখ ফজলে নূর তাপস ও বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট নেগোইতা এবং অন্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে আরো সম্প্রসারণে বাংলাদেশে রোমানিয়ার দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সেই সঙ্গে দু’দেশের মধ্যকার পর্যটন খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

তাপস বলেন, নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশে প্রচুর দক্ষ মানবসম্পদ সম্পদ রয়েছে এবং রোমানিয়ার অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ হতে এখাতের দক্ষ মানবসম্পদ নিতে পারে। মেয়র জানান, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে, যার সুযোগ গ্রহণ করে রোমানিয়ার উদ্যোক্তাদের ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ সমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, কোনো ধরণের রাজস্ব ও শুল্ক না বাড়িয়ে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন চলতি অর্থবছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিনি আরো বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ডিসিসিআইতে একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপন করবে, যাতে করে উদ্যোক্তারা ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই কম সময়ে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক ডায়ালগে ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সফররত রোমানিয়ার বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট নেগোইতা যথাক্রমে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ডায়ালগের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যর বর্হিবিশ্বে রপ্তানি সম্প্রসারণের বিষয়টি এখন সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে, এমতাবস্থায় রোমানিয়ার মত ইউরোপের অন্যান্য দেশসমূহে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির উপর আমাদের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪৯.৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২২.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রোমানিয়াতে রপ্তানি করে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ হতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে তৈরি পোষাক রোমানিয়ায় রপ্তানি হয়ে থাকে, তবে বাংলাদেশের আসবারপত্র, প্লাস্টিক পণ্য, ঔষধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য প্রভৃতি আমদানির জন্য রোমানিয়ার উদ্যোক্তাদের প্রতি ডিসিসিআই সভাপতি আহ্বান জানান। রোমানিয়ার শিল্পখাতের গতিধারা আরো সম্প্রসারণে বাংলাদেশ হতে বেশি হারে দক্ষ মানবসম্পদ আমদানির জন্য ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সেদেশের সরকারের প্রতি আবেদন জানান। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এ ধরণের শিল্প এলাকায় বিশেষ করে অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগে রোমানিয়ার উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে। তিনি দু’দেশের বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকায় রোমানিয়ার দূতবাস স্থাপনের জন্য সেদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে রোমানিয়ার বুখারেস্টের মেয়র রবার্ট নেগোইতা বলেন, দু’দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বেশ সামঞ্জস্যতা রয়েছে এবং দেশদুটোর বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দের যোগাযোগ আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণের প্রস্তাব করেন। তিনি উল্লেখ করেন, রোমানিয়োকে ইউরোপের দেশগুলোসমূহের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে এবং এ সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা তার দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য সহজেই ইউরোপে রপ্তানির সুযোগ পেতে পারে। তিনি জানান, বাংলাদেশের কৃষি ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে রোমানিয়া সহায়তা প্রদানে অত্যন্ত আগ্রহী। মেয়র বলেন, রোমানিয়ার টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে টেক্সটাইল খাতে দক্ষ কর্মী প্রেরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-এর সদ্য প্রাক্তন সভাপতি বেনজীর আহমেদ, এমপি, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডি)’র সদস্য (যুগ্ম সচিব) মো. নূরুল আমিন এবং বিকেএমইএ’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মানসুর আহমেদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

আলোনায় অংশ নিয়ে বেনজীর আহমেদ জানান, পৃথিবীর ১৬৩টি দেশে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করছে, যার মাধ্যমে তৈরি পোষাক খাতের পরই বাংলাদেশ এ খাত হতে সবচেয়ে রেমিট্যান্স আহরণ করে থাকে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন দক্ষ মানবসম্পদের পাশাপাশি স্বল্প দক্ষ মানবসম্পদ প্রেরণ করতে প্রস্তুত, তবে রোমানিয়াতে আরো বেশি হারে বাংলাদেশী শ্রমিক প্রেরণে তিনি বাংলাদেশে রোমানিয়ার দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব করেন। এনএসডিসি’র সদস্য মো. নূরুল আমিন জানান, এনএসডিতে বর্তমানে ১৩টি ‘ইন্ডাস্ট্র স্কিল কাউন্সিল’ রয়েছে, যার মাধ্যমে দেশে দক্ষ মানব তৈরিতে পরিকল্পনা ও বাস্তাবয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং ইউরোপের দেশসমূহে কি ধরণের মানবসম্পদ প্রয়োজন তা নির্ধারণে একটি জরিপ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিকেএমইএ’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মানসুর আহমেদ বলেন, রোমানিয়াতে আমাদের উৎপাদিত তৈরি পোষাক রপ্তানি আরো বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সার্বিকভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো সম্প্রসারণে আমাদের কে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উপর আরো বেশি হারে জোর দিতে হবে। তিনি রোমানিয়ার বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ সমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার উপর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ ডায়ালগে অংশগ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App