×

সম্পাদকীয়

ঢাবির শতবর্ষের মিলনমেলা : র‌্যাংকিং বাড়াতে গুরুত্ব দিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২২, ০২:০২ এএম

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিলনমেলায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার অ্যালামনাই। মিলনমেলায় অ্যালামনাই নেতৃবৃন্দ র‌্যাংকিং বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলছেন, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে আসতে পারেনি। বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাংকিংয়ে ১০০শ-র ভেতরে আনতে সংগঠন কাজ করছে বলে জানান। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। দীর্ঘদিনের পথচলায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও বিসর্জনের তালিকা অনেক দীর্ঘ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাশাপাশি এ অঞ্চলের জনমানুষের দাবি আদায়েও নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব জন-আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতাযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন বহুজন। বাংলাদেশের উত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গৌরবময় ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের লক্ষ্যে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য দ্বার খুলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। মাত্র ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী এবং ৩টি আবাসিক হল নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এতে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্রছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬,১৫০; পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২,০০৮ শিক্ষক। আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশের উৎসভূমির নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; যার নেতৃত্ব এবং শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে সূতিকাগার হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ৫০ বছর এবং পরের ৫০ বছর- এই দুই সময়ের রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাকে দুভাগে ভাগ করেন বিশ্লেষকদের অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ৫০ বছরে বাংলা ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমিকাকে ঐতিহ্য হিসেবে দেখেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে দলীয় রাজনীতির প্রভাব অব্যাহতভাবে বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সিট পেতে দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের বিভিন্ন পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ আছে। এমন পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হয়েছে এবং সেটাই উদ্বেগের। অর্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম নয়। তৈরি করেছে দেশ-বিদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান পণ্ডিত ও গবেষক। আজ দেশটির রাজনীতি, প্রশাসন, সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এ বিশ্ববিদ্যালয় আগে যেভাবে এদেশের সব অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছে সেভাবে আগামীতেও নেতৃত্ব দেবে। বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শুভ ও অশুভ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছে- এটা আমাদের আশাবাদী করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App